গুজরাটের সুরাটে বিজেপি প্রার্থী মুকেশ দালাল বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হয়েছেন। সেই ঘটনা নিয়ে শুরু হয়েছে বিতর্ক। সাধারণত পঞ্চায়েত বা পুরসভা নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ার ঘটনা ঘটে। বিধানসভা বা লোকসভায় সচরাচর ঘটে না।
কিন্তু সুরাটে লোকসভা নির্বাচনে এই ঘটনা ঘটায় শুরু হয়েছে বিতর্ক।
বিতর্কের অন্যতম কারণ হলো, কংগ্রেস প্রার্থীর মনোনয়ন টেকনিক্যাল কারণে বাতিল হয়েছে। বিএসপি প্রার্থীসহ সব মিলিয়ে আটজন মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। ফলে বিজেপি প্রার্থী বিনা লড়াইয়ে জয়ী হয়ে গেছেন।
সুরাটে কংগ্রেসের প্রার্থী ছিলেন নীলেশ কুম্ভানি। তার মনোনয়ন টেকনিক্যাল কারণে বাতিল হয়ে গেছে। তারপর তার বাড়ি তালাবদ্ধ । কংগ্রেসকর্মীরা তার বন্ধ বাড়ির সামনে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন।
স্লোগান দিয়েছেন, ‘জনতা কা গদ্দার’।
স্থানীয় সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, নীলেশের ফোন বন্ধ। তিনি কোথায় আছেন তা জানা যাচ্ছে না। নীলেশ বিজেপিতে যোগ দিতে পারেন বলেও স্থানীয় মিডিয়ায় রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে।
কমিশনে কংগ্রেস
এই ঘটনা নিয়ে নির্বাচন কমিশনে গেছে কংগ্রেস।
দলের মুখপাত্র অভিষেক মণু সিংভি জানিয়েছেন, অন্যায্য প্রভাব খাটিয়েছে বিজেপি। তাই সুরাটে নির্বাচনী পদ্ধতি আবার শুরু করতে হবে। অভিষেক বলেছেন, ‘আমরা নির্বাচন কমিশনকে বলেছি, সুরাটের নির্বাচন বাতিল ঘোষণা করা হোক। তাহলে স্পষ্ট বার্তা যাবে, এভাবে অন্যায্য উপায়ে কেউ জিততে পারবেন না।’
সিংভির দাবি, ‘সুরাটে নীলেশের মনোনয়নপত্রে চারজন প্রস্তাবক হিসাবে সই করেছিলেন। হঠাৎ চারজনই বলেন, ওটা তাদের সই নয়। এটা কাকতালীয় হতে পারে না। কংগ্রেস প্রার্থী কিছুক্ষণের জন্য নিখোঁজ ছিলেন। তিনি যখন আসেন, তখন দেখা যায়, বাকি সব প্রার্থী মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। কংগ্রেস প্রার্থীর মনোনয়নপত্র রিটার্নিং অফিসার বাতিল করে দেন।’
ঘটনাক্রম
১৮ এপ্রিল কংগ্রেস প্রার্থী নীলেশ মনোনয়নপত্র পেশ করেন। ১৯ তারিখ বিজেপি নেতা দীনেশ যোধানি অভিযোগ করেন, কংগ্রেস প্রার্থীর মনোনয়নে প্রস্তাবকদের সই জাল করা হয়েছে।
২০ এপ্রিল নির্বাচনী অফিসাররা জানান, তারা প্রস্তাবকদের কাছ থেকে হলফনামা পেয়েছেন। সেখানে বলা আছে, কংগ্রেস প্রার্থীর মনোনয়নপত্রে যে সই আছে, তা তাদের নয়।
২১ এপ্রিল জেলা নির্বাচনী অফিসার জানান, কংগ্রেস প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে। কারণ, তিনি বা তার প্রস্তাবকরা কেউই নির্ধারিত সময়ে তার কাছে আসেননি।
২২ এপ্রিল বিএসপি প্রার্থীসহ আটজন তাদের মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নেন। বিজেপি প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হন।
প্রধানমন্ত্রীর শুভেচ্ছা
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এক্স-এ বার্তা দিয়ে বিজেপি প্রার্থীকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ের জন্য অভিনন্দন জানিয়েছেন।
আশ্চর্য লাগছে
ভোট বিশেষজ্ঞ বিশ্বনাথ চক্রবর্তী একটি ভিডিও জারি করে বলেছেন, ‘গোটা ঘটনা দেখে আশ্চর্য লাগছে। বিএসপি প্রার্থী প্যারেলাল ভারতী আশ্চর্যজনকভাবে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করলেন, আরো আটজন নির্দল প্রার্থীও প্রত্যাহার করলেন। এই প্রত্যাহারের ঘটনা আমরা পশ্চিমবঙ্গে পঞ্চায়েতের ক্ষেত্রে দেখেছি। আমরা জানি, কেমনভাবে চাপ দিয়ে তা প্রত্যাহার করা হয়। সুরাটে কোন রহস্যে প্রত্যাহার করা হলো?’
বিশ্বনাথ বলেছেন, ‘আমাদের দায়বদ্ধতা গণতন্ত্রের প্রতি। আমাদের ভয় লাগছে। যেদিন থেকে নির্বাচন চর্চা করছি, তাতে অতীতে দেখিনি ভারতে লোকসভায় এ রকম হয়েছে। এটা ঠিক, সুরাট বিজেপির গড়। ১৯৮৯ থেকে বিজেপি এখানে পরাজিত হয়নি। সুরাটের অধীনে সাতটি বিধানসভা কেন্দ্রেও বিজেপি বিধায়ক আছেন। তা সত্ত্বেও এতজনের মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার ও বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়াটা অশনিসংকেত।’
Copyright Banglar Kontho ©2024
Design and developed by Md Sajibul Alom Sajon