রাশিয়া সোমবার বলেছে, ইউক্রেনের জন্য মার্কিন, ব্রিটিশ ও ফরাসি সামরিক সহায়তা বিশ্বকে বৃহত্তম পারমাণবিক শক্তিগুলোর মধ্যে সরাসরি সংঘর্ষের দ্বারপ্রান্তে ঠেলে দিয়েছে, যা বিপর্যয়ের মাধ্যমে শেষ হতে পারে। মার্কিন আইন প্রণেতারা ইউক্রেনের জন্য বিলিয়ন ডলার অতিরিক্ত সামরিক সহায়তা অনুমোদনের মাত্র দুই দিন পর রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটো রাশিয়ার ‘কৌশলগত পরাজয়’ ঘটানোর ধারণা নিয়ে মগ্ন।
তিনি আরো বলেন, ইউক্রেনের প্রতি পশ্চিমা সমর্থন যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের রাশিয়ার সঙ্গে সরাসরি সামরিক সংঘর্ষের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে গেছে।
লাভরভ মস্কোতে এক সম্মেলনে বলেছেন, ‘পশ্চিমারা বিপজ্জনকভাবে পারমাণবিক শক্তিগুলোর মধ্যে সরাসরি সামরিক সংঘর্ষের দ্বারপ্রান্তে বিপজ্জনকভাবে নাড়া দিচ্ছে, যা বিপর্যয়কর পরিণতিতে পরিপূর্ণ।
রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, বিশেষ উদ্বেগের বিষয় হলো, তিনটি পশ্চিমা পারমাণবিক রাষ্ট্র কিয়েভ শাসনের মূল পৃষ্ঠপোষকদের মধ্যে রয়েছে এবং বিভিন্ন উসকানিমূলক পদক্ষেপের প্রধান সূচনাকারী। তিনি বলেন, ‘আমরা এতে গুরুতর কৌশলগত ঝুঁকি দেখতে পাচ্ছি, যা পারমাণবিক বিপদের স্তরের বৃদ্ধির দিকে নির্দেশ করে।’
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ২০২২ সালে ইউক্রেনে আক্রমণ শুরু করেন। রুশ ও মার্কিন কূটনীতিকদের মতে, এ কারণে ১৯৬২ সালের কিউবান ক্ষেপণাস্ত্র সংকটের পর থেকে রাশিয়া ও পশ্চিমের মধ্যে সম্পর্কের সবচেয়ে খারাপ অবস্থায় পৌঁছেছে।
এ ছাড়া যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে রাশিয়া বারবার ক্রমবর্ধমান পারমাণবিক ঝুঁকি সম্পর্কে সতর্ক করেছে। যুক্তরাষ্ট্র বলেছে, এ সতর্কতাকে গুরুত্ব সহকারে নিতে হবে। যদিও মার্কিন কর্মকর্তারা বলেছেন, তাঁরা রাশিয়ান পারমাণবিক ভঙ্গিতে কোনো পরিবর্তন দেখেননি।
অন্যদিকে পুতিন এ যুদ্ধকে পতনশীল পশ্চিমের সঙ্গে শতাব্দীর পুরনো যুদ্ধের অংশ বলেছেন।
অন্যদিকে ইউক্রেন ও এর পশ্চিমা সমর্থকরা বলছেন, যুদ্ধটি একটি দুর্নীতিগ্রস্ত একনায়কতন্ত্রের সাম্রাজ্যশৈলীর ভূমি দখল, যা রাশিয়াকে একটি কৌশলগত পতনের দিকে নিয়ে যাবে। পশ্চিমা নেতারা ইউক্রেনে রুশ বাহিনীর পরাজয়ের জন্য কাজ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। সেই সঙ্গে সেখানে ন্যাটোর কোনো সদস্য মোতায়েনের কথাও অস্বীকার করেছেন তাঁরা।
প্রকৃত যুদ্ধ!
এদিকে যেহেতু সম্পর্কের অবনতি হয়েছে, রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্র—উভয়ই অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ চুক্তির বিচ্ছিন্নতার জন্য দুঃখ প্রকাশ করেছে। দেশ দুটি এখন পর্যন্ত বিশ্বের বৃহত্তম পারমাণবিক শক্তি।
বিশ্বের ১২ হাজার ১০০টি পারমাণবিক যুদ্ধাস্ত্রের মধ্যে ১০ হাজার ৬০০টিরও বেশি তাদের দখলে। ফ্রান্স ও ব্রিটেনের পর চীনের তৃতীয় বৃহত্তম পারমাণবিক অস্ত্রাগার রয়েছে।
বর্তমান সংকটের পরিপ্রেক্ষিতে অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনার কোনো ভিত্তি নেই দাবি করে লাভরভ বলেন, ‘আমাদের বিরুদ্ধে সর্বাত্মক হাইব্রিড যুদ্ধ চালানোর প্রেক্ষাপটে অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ ও সাধারণভাবে কৌশলগত স্থিতিশীলতার বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনার কোনো ভিত্তি নেই।’
এ ছাড়াও একতরফা সামরিক শ্রেষ্ঠত্ব অর্জনের প্রয়াসে অ-পরমাণু সক্ষমতা বিকাশের পাশাপাশি রাশিয়া ও চীনের পারমাণবিক অস্ত্রাগারের ওপর বিধি-নিষেধ আরোপ করার চেষ্টার জন্য পশ্চিমাদের অভিযুক্ত করেন লাভরভ। তিনি বলেন, পশ্চিমারা বিশ্বব্যাপী ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা তৈরি করছে, যা প্রতিদ্বন্দ্বীর ‘শিরশ্ছেদ’ করতে পারে। ইউরোপে পারমাণবিক অস্ত্র, বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে মাঝারি ও স্বল্পপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র এবং মহাকাশে অস্ত্র স্থাপনের প্রস্তুতির মাধ্যমে এটি করছে তারা।
ক পরমাণু অস্ত্র তৈরির খবরে উদ্বিগ্ন যুক্তরাষ্ট্রপুতিন ফেব্রুয়ারিতে বলেছিলেন, রাশিয়া মহাকাশে পারমাণবিক অস্ত্র স্থাপনের বিরোধিতা করে। পাশাপাশি রাশিয়া মহাকাশে পারমাণবিক সক্ষমতা বিকাশ করছে বলে ওয়াশিংটনের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন তাঁর প্রতিরক্ষামন্ত্রী।
যুক্তরাষ্ট্রের দাবি, তারা আন্তর্জাতিক চুক্তি অনুযায়ী তাদের প্রতিরক্ষা সক্ষমতা বিকাশ করছে। তারা কেবল মহাকাশের শান্তিপূর্ণ ব্যবহার চায় এবং তাদের ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা পরিকল্পনাগুলো প্রতিরক্ষামূলক।
এ ছাড়াও লাভরভ পশ্চিমাদের বিরুদ্ধে রাশিয়াকে অসম্মান করার জন্য একটি প্রচার-প্রচারণা চালানোর অভিযোগও করেছেন। তিনি বলেন, পশ্চিমের ‘লক্ষ্য হলো, মহাকাশে প্রকৃত হুমকি থেকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মনোযোগ সরিয়ে নেওয়া, তাদের জাতীয় সামরিক স্থানের সক্ষমতা গড়ে তোলার জন্য অতিরিক্ত আর্থিক সংস্থান বরাদ্দ করা।’
তিনি আরো বলেন, ‘আমাদের অগ্রাধিকার আন্তর্জাতিক আইনে বাধ্যতামূলক উপায়ের বিকাশ, যা মহাকাশে অস্ত্র স্থাপন রোধে নির্ভরযোগ্য নিশ্চয়তা স্থাপন করবে।’
সূত্র : রয়টার্স
Copyright Banglar Kontho ©2024
Design and developed by Md Sajibul Alom Sajon