ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, ইরানের হামলার জবাব দেওয়ার ব্যাপারে ইসরায়েল ‘নিজস্ব সিদ্ধান্ত’ নেবে। তাঁর সরকার আত্মরক্ষায় ‘প্রয়োজনীয় সব কিছুই’ করবে বলেও জানিয়েছেন তিনি। গতকাল বুধবার মন্ত্রিসভার বৈঠকের পর এই সিদ্ধান্তের কথা জানান ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী।
ইরানের নজিরবিহীন হামলার জবাব ইসরায়েল ঠিক কিভাবে দেবে তা নিয়ে ধোঁয়াশা ও উদ্বেগ রয়ে গেছে।
প্রধান মিত্র যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা নেতারা ইসরায়েলকে সংযত থাকার অনুরোধ করে বলছেন এমন কিছু না করতে যাতে যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়ে।
যুদ্ধ ঠেকাতে পশ্চিমা নেতাদের দৌড়ঝাঁপ
এরই মধ্যে ইউক্রেন যুদ্ধের জেরে বিশ্বের অর্থনীতি চাপের মধ্যে আছে। গাজায় ইসরায়েলি হামলা নিয়ে মধ্যপ্রাচ্য এরই মধ্যে উত্তপ্ত ছিল। এ অবস্থায় ইরানের হামলাকে কেন্দ্র করে সেখানে পূর্ণমাত্রার যুদ্ধ ঠেকাতে পশ্চিমা দেশগুলোর নেতারা আক্ষরিক অর্থেই দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন।
গতকাল বুধবার যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন ও জার্মানির পররাষ্ট্রমন্ত্রী আনালেনা বেয়ারবক ইসরায়েল সফর করেন। সফররত ক্যামেরন ও বেয়ারবকের সঙ্গে বৈঠকের পর নেতানিয়াহু নিজেদের পছন্দমতো সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা বলেন।
নেতানিয়াহুর সঙ্গে বৈঠকের পর জেরুজালেমে সাংবাদিকদের ডেভিড ক্যামেরন বলেন, ইরানের ‘ভয়াবহ’ হামলার পর ‘সংহতি প্রদর্শন’ করতে তিনি ইসরায়েল সফরে এসেছেন। এ ছাড়া বেয়ারবক ও ক্যামেরন ইসরায়েলের প্রেসিডেন্ট আইজ্যাক হেরজগের সঙ্গেও সাক্ষাৎ করেন।
জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী গতকালই ইসরায়েল ত্যাগ করেন। যাওয়ার সময় ওই অঞ্চলে ‘বিচক্ষণতা ও সংযমের’ ওপর জোর দিয়েছেন তিনি। ইসরায়েল সফরে রওনা হওয়ার আগে মঙ্গলবারই ইরানের ড্রোন প্রযুক্তির ওপর নিষেধাজ্ঞা দিতে ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতি আহ্বান জানিয়েছিলেন বেয়ারবক।
এর আগে গত মঙ্গলবার আরেক ঘনিষ্ঠ মিত্র যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেন। সুনাক নেতানিয়াহুকে ‘মাথা ঠাণ্ডা রাখার’ আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘উত্তেজনা বাড়লে কারোই স্বার্থ রক্ষা হবে না।
বরং এতে মধ্যপ্রাচ্যে নিরাপত্তাহীনতা আরো বাড়বে।’ নেতানিয়াহুর সঙ্গে কথা বলার সময় ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী গাজায় মানবিক সংকট বাড়তে থাকায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন।
ঋষি সুনাক গত সোমবার পার্লামেন্টে জানান, ইসরায়েলে ইরানের হামলার কারণে দেশটির বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিতে কাজ করছে শিল্পোন্নত সাত দেশের সংগঠন জি৭। সংগঠনটির বর্তমান সভাপতি দেশ ইতালি জানিয়েছে, ইসরায়েলের বিপক্ষে কাজ করা মানুষদের বিরুদ্ধে নতুন নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার বিষয়ে তাদের সমর্থন রয়েছে।
সাবেক প্রধানমন্ত্রীর আহ্বান
এদিকে সাবেক ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী এহুদ ওলমার্ট তাঁর দেশের সরকারকে ইরানের হামলার সামরিক জবাব না দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘ইরানের বিরুদ্ধে কঠিন জবাব আরেক দফা হামলা-পাল্টাহামলা বয়ে আনবে। ঠিক এই বিষয়টাই আমরা ঠেকাতে চাই।’
প্রসঙ্গত, স্থানীয় সময় গত শনিবার রাতে ইসরায়েলে তিন শতাধিক ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে ইরান। তেহরান বলেছে, সিরিয়ায় তাদের কনস্যুলেটে গত ১ এপ্রিলের ক্ষেপণাস্ত্র হামলার জবাব এটি। ওই হামলায় ইরানি সশস্ত্র বাহিনীর কয়েকজন শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তা নিহত হন। প্রায় অর্ধশতাব্দী আগে ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্কের তিক্ততা শুরু হওয়ার পর এই প্রথমবারের মতো দেশটির ভূখণ্ডে সরাসরি হামলা চালাল ইরান। সূত্র : বিবিসি, রয়টার্স, সিএনএন
Copyright Banglar Kontho ©2024
Design and developed by Md Sajibul Alom Sajon