দেশজুড়ে বহুল আলোচিত ও চাঞ্চল্যকর ডজনখানেকের বেশি মামলায় বিচারিক আদালতে রায় হলেও আটকে আছে উচ্চ আদালতে। এ মামলাগুলোর অধিকাংশই অধস্তন আদালতে বিচারকাজ সম্পন্ন হয়েছে দ্রুত বিচার আইনে। তবে উচ্চ আদালতে এসে আর গতি পায়নি। সুপ্রিম কোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখার তথ্য অনুযায়ী বর্তমানে হাই কোর্টে ১ হাজারের বেশি ডেথ রেফারেন্স (মৃত্যুদণ্ড অনুমোদন) মামলা বিচারাধীন।
আইনজ্ঞরা বলেন, ঝুলে থাকা এসব মামলার আপিল দ্রুত নিষ্পত্তিতে রাষ্ট্রপক্ষে উদ্যোগটা নিতে হবে। তারা প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করে প্রধান বিচারপতির দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারেন। তিনি বলেন, আলোচিত মামলাগুলোতে উল্লেখযোগ্য সাজা হলে, তা সমাজে বার্তা দেবে। একই সঙ্গে পাহাড়সম মামলাজট কমাতে উচ্চ আদালতে আরও অধিক সংখ্যক বিচারপতি নিয়োগ দেওয়ার পরামর্শও দেন তারা।
আলোচিত এসব মামলার মধ্যে হাই কোর্ট বিভাগে বিচারাধীন রয়েছে- রমনা বটমূলে বোমা হামলার ঘটনায় করা মামলা, ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলা, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলা, বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আবরার ফাহাদ হত্যা, ফেনীর মাদ্রাসার ছাত্রী নুসরাত জাহান রাফি হত্যা মামলা, অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা মেজর সিনহা হত্যা মামলা, লেখক-ব্লগার অভিজিৎ রায় হত্যা মামলা এবং প্রকাশক ফয়সাল আরেফিন দীপন হত্যা।
এছাড়া হাই কোর্টের রায় হলেও আপিল বিভাগে বিচারাধীন রয়েছে- পিলখানা বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (সাবেক বিডিআর) সদর দফতরে গণহত্যা মামলা, নারায়ণগঞ্জের সাত খুন মামলা, পুরান ঢাকার দর্জি বিশ্বজিৎ দাস হত্যা মামলা এবং ব্লগার আহমেদ রাজীব হায়দার শোভন হত্যার ঘটনায় করা মামলা।
এদিকে রাজধানীর গুলশানে হলি আর্টিজান বেকারিতে হামলার ঘটনায় সাত জঙ্গির মৃত্যুদণ্ডের সাজা কমিয়ে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেন হাই কোর্ট। তবে এ রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি এখনো প্রকাশ করা হয়নি।
সুপ্রিম কোর্টের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, উচ্চ আদালতে হত্যা মামলার আপিল বা ডেথ রেফারেন্স শুনানিতে কিছু প্রক্রিয়া অবলম্বন করতে হয়। প্রথমেই প্রয়োজন হয় পেপারবুক। মামলার এজাহার থেকে বিচারিক আদালতের রায় পর্যন্ত যাবতীয় নথি একত্রিত করে এই পেপারবুক তৈরি করা হয় এবং এটা বিজি প্রেস থেকে ছাপানো হয়। এ জন্যই সময় লেগে যায়। এ ছাড়া মামলাজটের কারণে এসব মামলা ক্রমানুসারে শুনানির জন্য কার্যতালিকায় আসতেও সময়ক্ষেপণ হয়।
সুপ্রিম কোর্টের পরিসংখ্যান অনুযায়ী- গত বছর ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত উচ্চ আদালতের উভয় বিভাগে বিচারাধীন মামলার সংখ্যা ৫ লাখ ৫৩ হাজার ১৯৩টি। এর মধ্যে হাই কোর্টে ৫ লাখ ২৮ হাজার ৫৮৩ এবং আপিল বিভাগে ২৪ হাজার ৬১০টি মামলা বিচারাধীন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আশা করছি মামলাগুলো দ্রুতই নিষ্পত্তি হবে। বহুল আলোচিত এসব মামলার বিষয়ে প্রধান বিচারপতির সঙ্গে কথা বলবেন বলেও জানান অ্যাটর্নি জেনারেল।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী সাবেক বিচারপতি ব্যারিস্টার এ বি এম আলতাফ হোসেন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আলোচিত এসব মামলা দ্রুত নিষ্পত্তিতে রাষ্ট্রপক্ষকে উদ্যোগ নিতে হবে। প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করে সংশ্লিষ্ট বেঞ্চ বা প্রধান বিচারপতি বরাবরে আবেদন করে তারা শুনানির ব্যবস্থা করতে পারেন। এ মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তি করা জরুরি। এ ঘটনাগুলো দেশজুড়ে আলোচিত হয়েছে। ফলে এসব ঘটনার সঙ্গে দায়ীদের দ্রুত সাজার আওতায় আনা গেলে সমাজে বার্তা যাবে।
এ বি এম আলতাফ আরও বলেন, শুধু এ মামলাগুলোই নয়, অসংখ্য ডেথ রেফারেন্স, যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত আসামির আপিল দীর্ঘদিন ধরে নিষ্পত্তি হচ্ছে না। যে আসামি মৃত্যুদণ্ডের সাজা নিয়ে বছরের পর বছর কারাগারের কনডেম সেলে কাটালেন এবং যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত যে আসামি এরই মধ্যে কয়েক বছর কারাগারে কাটিয়ে দিলেন এখন সেসব আসামি যদি উচ্চ আদালতের রায়ে খালাস পান তাহলে তার মানসিক অবস্থা কী হয়?
তিনি বলেন, বিচারপ্রার্থীর দ্রুত বিচার পাওয়ার অধিকার রয়েছে। আমরা চাইব ন্যায়বিচারের স্বার্থে মামলাগুলোর দ্রুত নিষ্পত্তির ব্যবস্থা নেওয়া হোক।
Copyright Banglar Kontho ©2024
Design and developed by Md Sajibul Alom Sajon