বিকে ডেস্ক :: ঋণ অনিয়মের কারণে তারল্যসংকটে পড়া ইসলামী ব্যাংক এখন উচ্চ সুদে আমানত সংগ্রহের প্রতি ঝুঁকছে। কারণ, আমানত ও দায়ের বিপরীতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের চাহিদা অনুযায়ী প্রতিদিন নগদ অর্থ জমা রাখতে (সিআরআর) ব্যর্থ হচ্ছে ব্যাংকটি। এ জন্য গুনতে হচ্ছে জরিমানা। তাই ব্যাংকটি এখন মুঠোফোনে আর্থিক সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান (এমএফএস) নগদের কাছ থেকে ৮ শতাংশ সুদে আমানত নিতে চায়।
জানা যায়, মুদারাবা স্পেশাল নোটিশ ডিপোজিট হিসাবে নগদের কাছ থেকে এই আমানত নিতে চাইছে ব্যাংকটি। যদিও ব্যাংকের ওয়েবসাইটের প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, এ হিসাবে আমানতের সুদের হার আড়াই শতাংশ। ফলে প্রচলিত হারের তিন গুণের বেশি সুদ প্রস্তাব করে তহবিল সংগ্রহে নেমেছে ব্যাংকটি।
জানতে চাইলে ইসলামী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুহাম্মদ মুনিরুল মওলা বলেন, সাম্প্রতিক পরিস্থিতিতে টাকার কিছুটা সংকট তৈরি হয়েছে। এ জন্য নগদকে এই মুনাফা দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। তবে এটা চূড়ান্ত নয়, বছর শেষে চূড়ান্ত মুনাফার হিসাব হবে।
ইসলামী ব্যাংকের নানা অনিয়ম আলোচনায় আসার পর ব্যাংকটিতে আমানত কমতে থাকে। এ জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক ইসলামি ধারার ব্যাংকগুলোকে টাকা ধার দিতে বিশেষ উদ্যোগ নেয়। ইসলামী ব্যাংক এত দিন বাংলাদেশ গভর্নমেন্ট ইসলামিক বিনিয়োগ বন্ড ও সুকুক বন্ড জমা দিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে টাকা ধার করলেও এখন সেই সুযোগও শেষ হয়ে এসেছে। কারণ, টাকা ধার করতে ব্যাংকটির হাতে ব্যবহারযোগ্য খুব বেশি বন্ড ও সুকুক নেই। ফলে ব্যাংকটির তারল্য জোগানে উচ্চ সুদে আমানত সংগ্রহের বিকল্প নেই। এদিকে বড় ধরনের ঋণ অনিয়মের কারণে সম্প্রতি ব্যাংকটিতে পর্যবেক্ষক নিয়োগ দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
এদিকে ইসলামী ব্যাংক ইসলামি ধারার অন্য ব্যাংকগুলোকে ৮ হাজার কোটি টাকা ধার দিয়ে রাখলেও সেই টাকা এখন ফেরত পাচ্ছে না। কারণ, যেসব ব্যাংককে টাকা ধার দিয়েছে সেগুলোও একই মালিকানার প্রতিষ্ঠান। এই ব্যাংকগুলো হলো ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী, গ্লোবাল ইসলামী, ইউনিয়ন ও সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক। সাম্প্রতিক পরিস্থিতিতে এসব ব্যাংকও তারল্যসংকটে পড়েছে। এসব ব্যাংকও বাংলাদেশ ব্যাংকে নিয়মিত সিআরআরের অর্থ রাখতে ব্যর্থ হচ্ছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের শীর্ষ পর্যায়ের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, গ্রাহকদের কেউ যাতে টাকা উত্তোলন করতে গিয়ে ফেরত না যান, সে বিষয়টি নিশ্চিত করতে ইসলামী ব্যাংককে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সিআরআর রাখতে না পারলে জরিমানা দেবে, এটা সমস্যা না। কিন্তু গ্রাহক টাকা না পেলে পুরো খাতে অস্থিরতা ছড়িয়ে পড়বে। সেই সুযোগ কাউকে দেওয়া হবে না।
জানা যায়, নগদ কর্তৃপক্ষ গত ২০ নভেম্বর ইসলামী ব্যাংকে টাকা রাখার আগ্রহ প্রকাশ করে চিঠি দিয়ে সুদহারের বিষয়টি জানতে চায়। এর পরিপ্রেক্ষিতে ইসলামী ব্যাংকের মহাখালী শাখার ব্যবস্থাপক আবুল কালাম আল আযাদ গত সোমবার নগদের এমডির কাছে চিঠি দিয়ে জানান, ইসলামী ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বিশেষ সুদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এক মাস মেয়াদি আমানতে সুদহার হবে ৮ শতাংশ।
জানতে চাইলে নগদের যোগাযোগ বিভাগের প্রধান জাহিদুল ইসলাম বলেন, ইসলামী ব্যাংকের প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।
ব্যাংকঋণের সুদহার এখন সর্বোচ্চ ৯ শতাংশ। ৮ শতাংশ সুদে টাকা সংগ্রহ করে ব্যাংকটি কীভাবে ব্যবসা করবে, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। ইসলামী ব্যাংকের আমানত এখন ১ লাখ ৪০ হাজার কোটি টাকা। গত ৩১ অক্টোবর যা ছিল ১ লাখ ৫৩ হাজার কোটি টাকা। ইসলামী ব্যাংক দেশের সবচেয়ে বড় ব্যাংক, ২০১৭ সালে ব্যাংকটির মালিকানা বদল হয়। এরপর থেকে অনিয়ম শুরু হয়।
এস এ
Copyright Banglar Kontho ©2022
Design and developed by Md Sajibul Alom Sajon