বিকে ডেস্ক :: যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লুর বাংলাদেশ সফরের মাধ্যমে দুই দেশের সম্পর্কের সম্পৃক্ততা আরও বৃদ্ধির ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। উভয় পক্ষ বর্তমান দূরত্ব ঘুচানোর প্রয়াস চালিয়ে যাবে বলে মনে করা হচ্ছে।
র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা, বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে প্রকাশ্যে মন্তব্য এবং মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের শাহীনবাগে গুম হওয়া বিএনপি নেতার বাসায় যাওয়া নিয়ে সরকারের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কে কিছুটা টানাপোড়েন দেখা দিয়েছিল। অপরদিকে বাংলাদেশের বিভিন্ন বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের উদ্বেগ নিরসনে ঢাকা তেমন সক্রিয় ছিল না। এভাবে সম্পর্কে স্থবিরতা দেখা দেওয়ার পর সম্পৃক্ততা বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়।
যদিও এই সফর আস্থা বৃদ্ধিতে কতটা কার্যকর হবে, সেটা এখনই স্পষ্ট হচ্ছে না। যুক্তরাষ্ট্র থেকে আরও কয়েকটি উচ্চপর্যায়ের সফর শিগগিরই অনুষ্ঠিত হবে। বিশেষ করে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের কাউন্সেলর ডেরেক্ট চোলেক্ট শিগগিরই ঢাকায় আসার কথা রয়েছে। তিনি মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের আন্ডার সেক্রেটারি পর্যায়ের নীতিনির্ধারণী উপদেষ্টা। তিনি বিভিন্ন ইস্যুতে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে উপদেশ দিয়ে থাকেন। তিনি মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর নির্দেশনায় বিশেষ কূটনৈতিক অ্যাসাইনমেন্ট পালন করেন। ডোনাল্ট লুর সফরের পর চোলেক্টের সফরকে তাই খুবই তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে।
জানতে চাইলে সুশীল সমাজের প্রতিনিধি সৈয়দা রেজওয়ানা হাসান সোমবার বলেন, ‘ডোনাল্ড লু মানবাধিকার, নির্বাচন, গণতন্ত্র, সামরিক কৌশল প্রভৃতি বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান জানিয়েছেন। এসব বিষয়ে বাংলাদেশও তার অবস্থান জানিয়েছে। বাংলাদেশের বিষয়টিকে যুক্তরাষ্ট্র খুবই গুরুত্বের সঙ্গে দেখছে। বাংলাদেশের কাছে যুক্তরাষ্ট্রের অনেক কিছু চাইবার আছে। বিশেষ করে বাংলাদেশে গণতন্ত্র, নির্বাচন, মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র খুবই নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে।’
ডোনাল্ড লু বারবার একটি কথাই স্পষ্ট করার চেষ্টা করেছেন যে, যুক্তরাষ্ট্র বিশেষ কোনো রাজনৈতিক দলের পক্ষে অবস্থান নেয়নি। বরং নির্বাচন, গণতন্ত্র, মানবাধিকার প্রভৃতি ইস্যুতে বিদ্যমান ব্যবস্থার গুণগত উন্নতিসাধনের চেষ্টা করছে। কৌশলগত দিক থেকে যুক্তরাষ্ট্র ইন্দো-প্যাসিফিক স্ট্র্যাটেজিতে বাংলাদেশকে অন্তর্ভুক্ত করার চেষ্টা করছে। বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন সুপারিশের বিষয় এখন আর সরাসরি নাকচ করছে না। বরং বিভিন্ন বিষয়ে পর্যালোচনা করছে। নির্বাচন প্রশ্নে বাংলাদেশের তরফে বলা হচ্ছে, সাংবিধানিক ব্যবস্থার বাইরে যাওয়া সম্ভব নয়। জানতে চাইলে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত ও সাবেক পররাষ্ট্র সচিব শমশের মোবিন চৌধুরী সোমবার যুগান্তরকে বলেন, ডোনাল্ড লুর সফরের ফলাফল খুবই ইতিবাচক। সব বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক বহুমাত্রিক। এই সফরে ভূরাজনীতি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। র্যাবের কর্মকাণ্ডে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন।
তিনি আরও বলেন, রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়ায় লু খুবই প্রশংসা করেছেন। সব দিক থেকে সফরটি গুরুত্বপূর্ণ। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের বাইডেন প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ কূটনীতিক। তার এই সফর খুবই সময়োপযোগী। দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক উন্নয়নে তার সফর ইতিবাচক অবদান রাখবে। তিনি দিল্লি থেকে ঢাকায় এসেছেন। তার বডি ল্যাঙ্গুয়েজ খুবই পজিটিভ। সফরটিকে উভয় পক্ষের জন্যে উইন উইন সফর বলে শমশের মোবিন চৌধুরী অবহিত করেন।
যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের নির্বাচন, রাজনীতি ও মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে প্রকাশ্যে মন্তব্য করাকে সরকার অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ বলে বিবেচনা করে। বাইডেন প্রশাসনের এই প্রবণতা নিয়ে প্রকাশ্যে ক্ষোভ ঝাড়লেও এখন ঢাকার সুর নরম। বাইডেন প্রশাসনও ভূরাজনীতির বর্তমান প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশকে বুঝিয়ে চীনের থেকে কিছুটা দূরে রাখার নীতি গ্রহণ করেছে। ট্রাম্পের আমলে অবশ্য পরিস্থিতি ছিল ভিন্ন। ট্রাম্প প্রশাসন ব্যবসা-বাণিজ্য নিয়ে অধিক মনোযোগী ছিল। ফলে বঙ্গবন্ধুর খুনি রাশেদ চৌধুরীকে ফিরিয়ে আনার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছিল।
ঢাকায় কূটনৈতিক সূত্রে জানা যায়, যুক্তরাষ্ট্র থেকে একের পর এক কর্মকর্তা বাংলাদেশ সফরে আসবেন। তবে কার আগে কে আসবেন, তা এখনো চূড়ান্ত হয়নি। এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র থেকে জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের জ্যেষ্ঠ পরিচালক বাংলাদেশ সফর করেছেন। মার্কিন সহায়তা সংস্থা ইউএসএআইডি’র উচ্চপর্যায়ের এক কর্মকর্তা শিগগিরই ঢাকায় আসবেন বলে আশা করা হচ্ছে। র্যাবের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা জারির পর বাংলাদেশ লবিস্ট নিয়োগ, রাজনৈতিক পর্যায়ে কংগ্রেসে বাংলাদেশ ককাস জোরদার করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
এস এ
Copyright Banglar Kontho ©2022
Design and developed by Md Sajibul Alom Sajon