আমেরিকা কাঁপানো ভয়াবহ ৫ ঘন্টা

২০২১ সালের ৬ জানুয়ারি। কংগ্রেসের যৌথ অধিবেশনে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ইলেকটোরাল ভোট সার্টিফাই করা হবে। ফলাফল অনুযায়ী ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রার্থী জো বাইডেন পেয়েছেন ৩০৬টি ইলেকটোরাল ভোট আর রিপাবলিকান পার্টির প্রার্থী তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প পেয়েছেন ২৩২টি। প্রেসিডেন্ট হওয়ার জন্য কমপক্ষে ২৭০টি ইলেকটোরাল ভোট প্রয়োজন। কিন্তু ঐদিন যাতে কংগ্রেসে ইলেকটোরাল ভোট জো বাইডেনের পক্ষে সার্টিফাই করা না হয়, তার জন্য ডোনাল্ড ট্রাম্প তার কট্টর ও উগ্রপন্থী সমর্থকদের ডেকে পাঠান ওয়াশিংটন ডিসিতে।

তারা এসে সমবেত হয় ক্যাপিটল হিল আর হোয়াইট হাউসের মাঝামাঝি জায়গায়। এবং দুপুর ১২.৫৩ মিনিটে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের নির্দেশে ঝাঁপিয়ে পড়ে ক্যাপিটল বিল্ডিংএ। ডিসি মেট্রোপলিটন পুলিশকে মেরে, জানালা-দরোজা ভেঙে, সব বাধা অতিক্রম করে ঢুকে পড়ে ক্যাপিটল হিলে। তাদের সাথে ছিল ফ্লাগের পোল এবং কিছু অস্ত্র। তারা সিনেট চেম্বারে ঢুকে খুঁজতে থাকে ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্সকে। হাউজে ঢুকে স্পিকার ন্যান্সিকে গালিগালাজ করতে থাকে। তারা হাউজ এবং সিনেট চেম্বারসহ ন্যান্সি পেলোসির রুম তছনছ করে, ফাইলপত্র ছিড়ে ফেলে। উগ্রপন্থীরা পুলিশকেও মারধর করে। একজনকে মেরে ফেলে। তারা হন্যে হয়ে খুঁজতে খুঁজতে মাইক পেন্সকে বাইরে নিয়ে ফাঁসিতে ঝোলানোর শ্লোগান দেয়।

এই যখন তান্ডব, লাইভ টিভিতে সেই দৃশ্য প্রত্যক্ষ করে বিশ্বব্যাপি মানুষ হতভম্ব হয়ে যায়। এ সময় প্রেসিডেন্ট ইলেক্ট জো বাইডেন লাইভ ভাষণে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে অবিলম্বে উগ্রবাদীদের ক্যাপিটল বিল্ডিং ছাড়ার নির্দেশ দিতে বললে, ডোনাল্ড ট্রাম্প তাদের ফিরে যাওয়ার নির্দেশ দিয়ে এই চরমপন্থীদের বলেন, ‘আই লাভ ইউ’।

রাতে ফিরে আসেন কংগ্রেসের সদস্যরা। এবং উগ্রপন্থীসহ প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে তুলোধূনো করেন রিপাবলিকান সদস্যরা এবং ইলেকটোরাল ভোট সার্টিফাই করেন। তা সত্তে¡ও ডোনাল্ড ট্রাম্প তার পরাজয় মেনে নেননি, নতুন প্রেসিডেন্টকে স্বাগত জানাননি। আমেরিকার গণতন্ত্রের ইতিহাসে ৬ জানুয়ারি একটি কলংকিত দিন।

ডেমোক্রেটিক কংগ্রেস সদস্যরা ৬ জানুয়ারির আক্রমণের শিকার হওয়াদের প্রতি বিন¤্র শ্রদ্ধা জানান। ক্যাপিটল বিল্ডিংএ নিহত পুলিশ অফিসারের স্ত্রী ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে এদিন ৩০ মিলিয়ন ডলারের ক্ষতিপূরণ চেয়ে মামলা করেন এবং নিউইয়র্ক স্টেট সিনেটর ব্র্যাড হয়েলম্যান একটি বিল উত্থাপন করেন সিনেটে রায়ট এ্যাক্ট নামে। যাতে বলা হয় কখনোই কেউ কোনো বিদ্রোহী স্টেট ক্যাপিটল বিল্ডিং দখলের চেষ্টা করলে তা হবে গুরুতর অপরাধ।

শুক্রবার দুপুরে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন হোয়াইট হাউসে ৬ জানুয়ারির আঘাতপ্রাপ্তদের স্মরণ করে সেইসাথে গণতন্ত্র রক্ষার সংকল্প করে দীর্ঘ ভাষণ দেন আবেগাপ্লুত ভাষায়। সেই সাথে তিনি ৬ জানুয়ারি ক্যাপিটল বিল্ডিংএর ভিতরে-বাইরে যারা সাহসিকতা প্রদান করেন তাদের মধ্য থেকে ১৪ জনকে প্রেসিডেনশিয়াল সিটিজেনস মেডেল প্রদান করেন।

এই আমেরিকা কাঁপানো ভয়াবহ ৫ ঘন্টায় এদেশের আড়াইশ বছরের গণতন্ত্রের গায়ে যে কালিমা লেপনের চেষ্টা করেন ডোনাল্ড ট্রাম্প, তার ধারাবাহিকতা আজো অব্যাহত রয়েছে।