মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বেলারুশে রাশিয়ার কৌশলগত পারমাণবিক অস্ত্র মোতায়েনের পরিকল্পনায় মস্কোর সমালোচনা করেছিলেন। এবার রাশিয়া শনিবার সে সমালোচনা প্রত্যাখ্যান করে বলেছে, ওয়াশিংটন কয়েক দশক ধরে ইউরোপে ঠিক এই ধরনের পারমাণবিক অস্ত্র স্থাপন করেছে।
এর আগে রাশিয়া বৃহস্পতিবার বলেছে, তারা ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর থেকে তার সীমান্তের বাইরে এ ধরনের অস্ত্রের প্রথম মোতায়েন নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। অন্যদিকে বেলারুশিয়ান প্রেসিডেন্ট আলেক্সান্ডার লুকাশেঙ্কো বলেছেন, ইতিমধ্যে অস্ত্রগুলো স্থানান্তর শুরু হয়েছে।
আরো পড়ুন : বেলারুশে যাচ্ছে রুশ পরমাণু অস্ত্র, পুতিনের সঙ্গে আলোচনার অপেক্ষায় শলৎস
এরপর বাইডেন শুক্রবার বলেন, রাশিয়া বেলারুশে কৌশলগত পারমাণবিক অস্ত্র মোতায়েনের পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়েছে—এমন খবরে তিনি ‘অত্যন্ত নেতিবাচক’ প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছেন। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরও রাশিয়ার পরমাণু স্থাপনার পরিকল্পনার নিন্দা করেছে।
আরো পড়ুন : বেলারুশে পারমাণবিক অস্ত্র মোতায়েনের ঘোষণা দিল পুতিন
যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থিত রাশিয়ার দূতাবাস এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘আমাদের বিরুদ্ধে ওয়াশিংটনের মাধ্যমে শুরু হওয়া বৃহৎ আকারের হাইব্রিড যুদ্ধের মধ্যে আমরা রাশিয়া ও বেলারুশের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা প্রয়োজনীয় বলে মনে করি। এটি আমাদের সার্বভৌম অধিকার।
আমরা যে ব্যবস্থা গ্রহণ করি তা আমাদের আন্তর্জাতিক আইনি বাধ্যবাধকতার সঙ্গে সম্পূর্ণ সামঞ্জস্যপূর্ণ।’
আরো পড়ুন : বেলারুশ নিয়ে ভয়াবহ পরিকল্পনা মস্কোর, নথি প্রকাশ
যুক্তরাষ্ট্র বলছে, ইউক্রেন সংঘাতের সময় রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের মন্তব্যের কারণে ১৯৬২ সালের কিউবান ক্ষেপণাস্ত্র সংকটের পর থেকে বিশ্ব সবচেয়ে বড় পারমাণবিক বিপদের মুখোমুখি হয়েছে। কিন্তু মস্কোর দাবি, তাদের অবস্থানের ভুল ব্যাখ্যা করা হয়েছে। এ ছাড়াও আক্রমণাত্মক পশ্চিমের বিরুদ্ধে রাশিয়ার টিকে থাকার যুদ্ধ হিসেবে ইউক্রেন যুদ্ধকে নিক্ষেপকারী পুতিন বারবার সতর্ক করেছেন, রাশিয়ার কাছে অন্য যেকোনো দেশের চেয়ে বেশি পারমাণবিক অস্ত্র রয়েছে এবং তারা আত্মরক্ষার জন্য সমস্ত উপায় ব্যবহার করবে।
আরো পড়ুন : রাশিয়ার পারমাণবিক যুদ্ধের হুমকি আসলে কতটা উদ্বেগজনক?
প্রসঙ্গত, কৌশলগত পারমাণবিক অস্ত্রগুলো যুদ্ধক্ষেত্রে কৌশলগত লাভের জন্য ব্যবহার করা হয় এবং সাধারণত মার্কিন, ইউরোপীয় বা রাশিয়ান শহরগুলোকে ধ্বংস করার জন্য বানানো কৌশলগত পারমাণবিক অস্ত্রের তুলনায় ছোট হয়।
এদিকে রাশিয়ান দূতাবাস মস্কোর পরিকল্পিত স্থাপনার মার্কিন সমালোচনাকে ভণ্ডামি বলে অভিহিত করে বলেছে, ‘অন্যদের দোষারোপ করার আগে, ওয়াশিংটন কিছুটা আত্মদর্শন ব্যবহার করতে পারে। যুক্তরাষ্ট্র কয়েক দশক ধরে ইউরোপে তাদের পারমাণবিক অস্ত্রের বিশাল অস্ত্রাগার বজায় রেখেছে। এ ছাড়াও তারা ন্যাটো মিত্রদের সঙ্গে আমাদের দেশের বিরুদ্ধে পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের পরিস্থিতির জন্য পারমাণবিক ভাগাভাগি ব্যবস্থা ও অনুশীলনে অংশগ্রহণ করে।’
উল্লেখ্য, ৩৪তম মার্কিন প্রেসিডেন্ট যুয়াইট ডি আইজেনহাওয়ার সোভিয়েত ইউনিয়নের কাছ থেকে অনুভূত হুমকির পাল্টা হিসেবে স্নায়ুযুদ্ধে পারমাণবিক অস্ত্র স্থাপনের অনুমোদন দেন।
এর পর থেকে যুক্তরাষ্ট্র পশ্চিম ইউরোপে পারমাণবিক অস্ত্র স্থাপন করেছে। ইউরোপে প্রথম মার্কিন পরমাণু অস্ত্র ১৯৫৪ সালে ব্রিটেনে মোতায়েন করা হয়েছিল।
যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান মোতায়েন সম্পর্কে বেশির ভাগ বিশদ তথ্য গোপন রাখা হয়েছে। তবে ফেডারেশন অব আমেরিকান সায়েন্টিস্ট বলে, যুক্তরাষ্ট্রের ১০০টি বি৬১ কৌশলগত পারমাণবিক অস্ত্র ইউরোপে মোতায়েন রয়েছে—ইতালি, জার্মানি, তুরস্ক, বেলজিয়াম ও নেদারল্যান্ডসে।
সূত্র : রয়টার্স
Copyright Banglar Kontho ©2024
Design and developed by Md Sajibul Alom Sajon