একটি জাতির সাহিত্য ও সংস্কৃতিকে যদি ধ্বংস করা যায়, তাহলে আর কোন অত্যাচার নির্যাতনের প্রয়োজন হয় না এমনিতেই পঙ্গু হয়ে যাবে। এই গভীর ষড়যন্ত্র করেই তারা বাংলা ভাষার পরিবর্তে উর্দুকে বাঙ্গালীদের উপর চাপিয়ে দিতে চেয়েছিল। বাঙালি সেদিন পাকিস্তানের সকল ষড়যন্ত্র নস্যাৎ করে দিয়ে রক্ত দিয়ে মায়ের ভাষা কেড়ে নিয়ে এসেছিল। কবি আবু জাফর ওবায়দুল্লাহ যথার্থই বলেছেন:
মাগো, ওরা বলে,
সবার কথা কেড়ে নেবে
তোমার কোলে শুয়ে
গল্প শুনতে দেবে না।
বলো, মা, তাই কি হয়?
মাতৃভাষার মাধ্যমেই মানুষ প্রকাশ করে তার আশা-আকাঙ্ক্ষা, আবেগ-অনুভূতি। জাতীয় জীবনে মাতৃভাষার গুরুত্ব অপরিসীম। কবি রামনিধি গুপ্তের ভাষায়- ‘নানান দেশের নানান ভাষা/বিনা স্বদেশি ভাষা; পুরে কি আশা।”
১৯৪৭ সালের দেশ বিভাগের পরে বাংলার উপরে নেমে আসে উর্দুর অপচ্ছায়া। পাকিস্তানের তৎকালীন গভর্নর জেনারেল মুহম্মদ আলী জিন্নাহ যখন ঢাকার বুকে দাঁড়িয়ে দম্ভ করে ঘোষণা দেন ‘উর্দু এবং উর্দুই হবে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা’। তখন প্রতিবাদে, ক্ষোভে ফেটে পড়ে বাংলাভাষী লাখো জনতা।
১৯৫২ সালে একুশে ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে ‘রাষ্ট্রভাষা দিবস’ ও সাধারণ ধর্মঘট পালনের সিদ্ধান্ত হয়। পাকিস্তান সরকার আন্দোলন দমন করার জন্য ১৪৪ ধারা জারির মাধ্যমে জনসমাগম, জনসভা ও মিছিল নিষিদ্ধ করে দেয়। ছাত্ররা সংগঠিতভাবে ১৪৪ ধারা ভাঙলে পুলিশ গুলি চালায়। শহীদ হন সালাম, রফিক, জব্বার, বরকতসহ আরও অনেকে।
পরদিন সারা রাত জেগে শহীদদের স্মরণে গড়া হয় শহীদ মিনার। পুলিশ তা ভেঙে ফেললে আবারও গড়ে ওঠে শহীদ মিনার। ভাষা আন্দোলনের ভেতর দিয়ে বাঙালি জাতিসত্তায় জন্ম নিয়েছিল একুশের চেতনা। এই চেতনা আমাদের জাতীয় জীবনে আত্মত্যাগের বীজমন্ত্র।
বাঙালি জাতির জীবনে ১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর আরো একটি ঐতিহাসিক ও গৌরবময় দিন। জাতিসংঘের শিক্ষা বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি বিষয়ক সংস্থা UNESCO একুশে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করে।
‘একুশ আমার চেতনা/একুশ আমার গর্ব’ কেবল বাংলা ভাষাকে নয়, পৃথিবীর সকল ভাষার নিজস্ব মহিমা অক্ষুন্ন রাখার দীপ্ত শপথ নেবার দিন হচ্ছে একুশে ফেব্রুয়ারি। বাঙালি হিসেবে আজ আমাদের সবার অঙ্গীকার সর্বস্তরে বাংলা-ভাষার প্রচার ও প্রসার।
সুব্রত তালুকদার।
রাজনীতিক ও কলামিস্ট।
Copyright Banglar Kontho ©2024
Design and developed by Md Sajibul Alom Sajon