আন্তর্জাতিক ডেস্ক : যুক্তরাজ্যের রাজ পরিবারের কনিষ্ঠ পুত্র ও সিংহাসনের দ্বিতীয় উত্তরাধিকারী প্রিন্স হ্যারির বহুল আলোচিত স্মৃতিকথা ‘স্পেয়ার’ ১০ জানুয়ারি আনুষ্ঠানিকভাবে বাজারে এসেছে। দুনিয়াজুড়ে মোট ১৬টি ভাষায় প্রকাশিত হওয়া বইটি বাজারে আসতে না আসতেই পাঠকদের কাছে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে।
আত্মজীবনী হিসেবে লেখা এই বইয়ে ব্রিটেনের রাজপরিবার থেকে বের হয়ে আসা এই রাজপুত্র তার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে ব্যক্তিগত দূরত্ব ও টানাপড়েনের ঘটনা তুলে ধরেছেন। এছাড়া রাজপরিবারের অন্য সদস্যদের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ তুলেছেন। লিখেছেন, কী পরিস্থিতিতে তিনি ও তার স্ত্রী বাধ্য হয়েছেন রাজ পরিবার ছেড়ে আসতে। বাবা, বড় ভাই যুবরাজ উইলিয়ামসের সঙ্গে ব্যক্তিগত সম্পর্ক এবং রাজপরিবারের সঙ্গে তার দূরত্ব সৃষ্টির বিভিন্ন ঘটনা উঠে এসেছে বইটিতে।
‘স্পেয়ার’ প্রকাশের আগে মঙ্গলবার যুক্তরাজ্যের চ্যানেল আইটিভিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে হ্যারি বলেন, ‘আমি আমার বাবাকে ফিরে পেতে চাই। আমি আমার ভাইকে ফিরে পেতে চাই।’ তিনি আরও বলেন, আমি কখনোই চাই না আমার সন্তানরা বাবা অথবা মা কোনো একজনকে ছাড়া বড় হোক।
হ্যারি বলেন, ‘আমি আপনার সামনে বসে একটি পরিবারের জন্য আর্জি জানাচ্ছি, প্রতিষ্ঠানের জন্য নয়। আমি একটি পরিবার চাই। বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া অনেক কঠিন, তবে আমি কয়েক বছর ধরে যে অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে গেছি তাতে রাজ পরিবার ছেড়ে আসাটাই সঠিক সিদ্ধান্ত হয়েছে।’
বইটিতে হ্যারি স্বীকার করেছেন যে, তিনি তার বয়ঃসন্ধিকালে মাদক গ্রহণ করেছেন। মায়ের মৃত্যুর পর মানসিকভাবে খুবই ভেঙে পড়েছিলেন তিনি এবং তার জেরে কৈশোরেই মাদকাসক্ত হয়ে পড়েছিলেন। সে সময় নিয়মিত কোকেন সেবন করতেন বলে উল্লেখ করেছেন স্পেয়ারে।
স্পেয়ারে হ্যারির সবচেয়ে বিস্ফোরক দাবিগুলোর একটি হচ্ছে, তার বাবা রাজা চার্লস তৃতীয়, ভাই উইলিয়াম, সৎ মা কুইন কনসর্ট ক্যামিলা এবং তার ভাবি কেটের সঙ্গে স্ত্রী মেগানকে নিয়ে তর্কের সময় উইলিয়াম তাকে মেঝেতে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়েছিলেন।
কথিত এই হাতাহাতি হয়েছিল দুই ভাইয়ের কথোপকথনের পরে। ব্রিটিশ সিংহাসনের উত্তরাধিকারী উইলিয়াম ওই তর্কের সময় মেগানকে ‘অনমনীয়’, ‘অভদ্র’ এবং ‘অনুভূতিহীন’ বলে আখ্যায়িত করেন।
হ্যারি লিখেছেন, উইলিয়াম ‘আমার কলার চেপে ধরে, আমার নেকলেস ছিঁড়ে ফেলে, এবং আমাকে মেঝেতে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়। হ্যারি আরও দাবি করেছেন, ২০১৯ সাালের ওই দিনে তর্কের সময় তার ভাই তাকে লক্ষ্য করে মারতে গিয়ে একটি বাটি ভেঙে ফেলেন।
এছাড়া হ্যারি তার স্মৃতিকথায় স্বাভাবিকভাবেই তার মা ডায়ানার মৃত্যুর প্রসঙ্গ টেনেছেন। ডায়ানা ১৯৯৭ সালে যখন মারা যান, তখন হ্যারির বয়স ছিল ১২ বছর। সেদিন মায়ের মৃত্যু সংবাদ দেওয়ার সময় তার বাবা একবারের জন্যও তাকে (হ্যারি) জড়িয়ে ধরেন নি। বরং তাকে তার ঘরে একা রেখে চলে যান।
স্পেয়ারে হ্যারি আরও লিখেছেন, ডায়ানার মৃত্যুর পর ক্যামিলাকে বিয়ে না করতে বাবা চার্লসকে অনুরোধ করেছিলেন তিনি (হ্যারি) এবং প্রিন্স উইলিয়াম। সেই সময়ে বাবাকে তারা বলেছিলেন, ‘আপনাকে আর বিয়ে করতে হবে না, আমরা অনুরোধ করলাম। আমরা আপনাকে সমর্থন করি। ক্যামিলাকেও সমর্থন করি। শুধু দয়া করে তাকে বিয়ে করবেন না।’
এসব ছাড়াও প্রিন্স হ্যারির বই স্পেয়ারে রাজপরিবার নিয়ে আরও অনেক কথা উঠে এসেছে। মূলত এই সব অজানা তথ্য গুলো জানার জন্যই এই বইটি নিয় ব্যাপক হৈচৈ তৈরি হয়েছে। মঙ্গলবার ৪১৬ পৃষ্ঠার বইটি প্রকাশের পর, পাঠকদের ভিড় সামলাতে লন্ডনের বইয়ের দোকানগুলো মধ্যরাত পর্যন্ত খোলা রাখতে হয়েছে। এক দশকে সবচেয়ে বেশি প্রি-অর্ডার হওয়া বইয়ের তালিকায় নাম লিখিয়েছে প্রিন্স হ্যারির ‘স্পেয়ার’। গার্ডিয়ানের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।
Copyright Banglar Kontho ©2024
Design and developed by Md Sajibul Alom Sajon