আন্তর্জাতিক ডেস্ক : তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়ন তথা পূর্ব ইউরোপে কমিউনিজম পতনের ( ১৯৮৯ সালে) পর ২০২২ সালই সম্ভবত সবচেয়ে অস্থির এবং আলোচিত বছর। ইউক্রেন ও তাইওয়ান সংকট বছরজুড়ে সবচেয়ে বেশি আলোচনায় ছিল। এ দুই সংকটের বাইরেও বছরটি আলোচিত আরেকটি কারণে। এ বছরই চীনকে অন্যতম পরাশক্তি ও প্রতিদ্বন্দ্বী বলে আখ্যা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। অনেক বিশ্লেষকের মতে, সিনো-মার্কিন প্রতিদ্বন্দ্বিতা অনেকটা স্নায়ুযুদ্ধেরই প্রতিচ্ছবি।
গত অক্টোবরে প্রকাশিত মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা কৌশলপত্রে চীনকে যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তার জন্য ‘সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জ’ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। পাশাপাশি দ্ব্যর্থহীন ভাষায় স্নায়ুযুদ্ধ পরবর্তী যুগ শেষ হয়েছে বলে ঘোষণা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
স্নায়ুযুদ্ধ পরবর্তী যুগে যুক্তরাষ্ট্রই ছিল একক পরাশক্তি এবং একমেরু বিশ্ব ব্যবস্থার কেন্দ্রে। চীনকে পরাশক্তি- প্রতিদ্বন্দ্বী বলে স্বীকার করার পর যুক্তরাষ্ট্রের সেই অবস্থান আর থাকে না। তাই যুক্তরাষ্ট্র ও চীনকেন্দ্রিক দ্বিমেরু বিশ্ব ব্যবস্থাই এখন বাস্তবতা।
চীন-যুক্তরাষ্ট্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা অনেক কারণেই অনন্য। এ প্রতিদ্বন্দ্বিতার মাত্রা এবং ধরন আগামী দিনের বিশ্বব্যবস্থায় কেমন হবে, তা কতটা স্থিতিশীল হবে এবং সে অবস্থায় রাষ্ট্রনেতারা কীভাবে আচরণ করবেন সে বিষয়ে পর্যাপ্ত ইঙ্গিত দিয়েছে।
ইন্দোনেশিয়ার বালিতে গত নভেম্বরে অনুষ্ঠিত জি-২০ সম্মেলনে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এবং চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের মধ্যে অনুষ্ঠিত বৈঠককে ‘স্নায়ুযুদ্ধ-২-এর প্রথম পরাশক্তি সম্মেলন’ বলে আখ্যা দিয়েছেন বারাক ওবামা প্রশাসনের এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল বিষয়ক উপদেষ্টা ইভান মেডিরস।
সিনো-মার্কিন দ্বৈরথ এরই মধ্যে বিশ্বে উদ্বেগ তৈরি করেছে। বিশেষ করে ইউরোপে। কারণ মহাদেশটিতে স্নায়ুযুদ্ধকালীন ব্লকের মতো প্রতিদ্বন্দ্বী ব্লক তৈরির সমূহ সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। উন্নয়নশীল দেশগুলো কোন দিকে যাবে তা নিয়ে এখনো নৈতিক সংকটে আটকে পড়েছে। এই সংকট থেকে উত্তরণ এখনই মিলছে না। কারণ, সিনো-মার্কিন দ্বিমেরু এখন কাঠামোগত বাস্তবতা। এর কারণ হলো বিগত কয়েক দশক ধরে চীনের অর্থনৈতিক ও সামরিক উত্থান, যা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সব ধরনের ব্যবধান প্রায় ঘুচিয়ে এনেছে।
কাঠামোগতভাবে দ্বিমেরু বিশ্ব ব্যবস্থাকে বহু মেরুক বিশ্বব্যবস্থার চেয়ে অনেক বেশি স্থিতিশীল বলে বিবেচনা করা হয়। এর প্রমাণও আছে। স্নায়ুযুদ্ধের সময় যুক্তরাষ্ট্র এবং রাশিয়া অস্ত্রের প্রতিযোগিতা করলেও তা কখনোই যুদ্ধ পর্যন্ত গড়ায়নি। দুই দেশের নেতৃত্বাধীন ব্লকে সবসময় উত্তেজনা বিরাজ করলেও সেই সময়টা তুলনামূলক স্থিতিশীল ছিল। এ কারণেই প্রখ্যাত ইতিহাসবিদ জন লুইস গ্যাডিস স্নায়ুযুদ্ধের যুগকে ‘লং পিস’ বা ‘দীর্ঘস্থায়ী শান্তি’ বলে আখ্যা দিয়েছিলেন।
চীন-যুক্তরাষ্ট্রের দ্বৈরথ নতুন দ্বিমেরু বিশ্বকে স্নায়ুযুদ্ধের সময়ের চেয়ে বেশি অস্থিতিশীল করবে এমনটা ভাবার যথেষ্ট কারণ রয়েছে। এ কারণেই এই ব্যবস্থায় স্থিতিশীলতা বজায় রাখার জন্য প্রয়োজন পড়বে দায়িত্বশীল রাষ্ট্রনায়কের।
Copyright Banglar Kontho ©2022
Design and developed by Md Sajibul Alom Sajon