আন্তর্জাতিক : শান্তির দেশ হিসেবে পরিচিত নিউজিল্যান্ডের আর কোনো শাসক জেসিন্ডা আরডার্নের মতো বিশ্বজুড়ে এমন আলোড়ন তোলেননি। মাত্র ৩৭ বছর বয়সে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নিয়ে জেসিন্ডা বড় বড় চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করেছেন। ক্রাইস্টচার্চের মসজিদে দেশটির ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলার পর শক্ত হাতে গোটা পরিস্থিতি সামলেছেন। নেতৃত্বের দক্ষতায় বিশ্বের অন্যতম প্রভাবশালী নারী হয়ে উঠেছেন তিনি। তবে রাজনৈতিক ক্যারিয়ারের মধ্যগগনে থেকেও হঠাৎ তার এমন সরে দাঁড়ানোর ঘোষণায় বিস্মিত সবাই। খবর দ্য গার্ডিয়ানের।
বৃহস্পতিবার (১৯ জানুয়ারি) নিজের পদত্যাগের ঘোষণা দেন জেসিন্ডা আরডার্ন। নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে আগামী ৭ ফেব্রুয়ারি শেষ কর্মদিবস হবে তার। এরপর দেশটির লেবার পার্টিতে তার উত্তরসূরি নির্বাচনে অনুষ্ঠিত হবে ভোট। আচমকা তার এভাবে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা আলোচিত হচ্ছে বিশ্বজুড়ে।
২০১৭ সালে মাত্র ৩৭ বছর বয়সে নিউজিল্যান্ডের সরকারপ্রধান নির্বাচিত হন জেসিন্ডা আরডার্ন। প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন সন্তান জন্ম দিয়ে আলোড়ন তৈরি করেন তিনি। মেয়ে কোলে নিয়ে তার জাতিসংঘ অধিবেশনে যোগদানের ভিডিও ভাইরাল হয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।
তবে আন্তর্জাতিক অঙ্গণে জেসিন্ডা সবচেয়ে বেশি আলোচনায় আসেন প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণের দু’বছরের মাথায়। ক্রাইস্টচার্চের দুটি মসজিদে ব্রেন্টন ট্যারান্টের বর্বরোচিত হত্যাযজ্ঞের পর তিনি পরিস্থিতি সামাল দেন দক্ষতার সাথে। স্পর্শকাতর সময়ে ঐক্যের বার্তা দেন শোকস্তব্ধ দেশকে। আতঙ্কিত মুসলিম পরিবারগুলোর পাশে দাঁড়ান তিনি। কেবল তাই নয়, অস্ত্র আইন কড়াকড়িতে দ্রুত পদক্ষেপ নিয়ে সাড়া ফেলে দেন জেসিন্ডা।
করোনা মহামারি মোকাবেলায়ও প্রশংসিত হয় জেসিন্ডা আরডার্নের দক্ষতা। করোনায় সবচেয়ে কম মৃত্যুহারের দেশগুলোর একটি ছিল নিউজিল্যান্ড। সে সাফল্যের হাত ধরেই ২০২০ সালে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো কিউই প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পান জেসিন্ডা।
কিন্তু জনপ্রিয়তার তুঙ্গে থাকা অবস্থায় হঠাৎ বিদায়ের ঘোষণা এলো। অবশ্য আবেগতাড়িত হয়েও জেসিন্ডা স্বভাবসুলভ সোজাসাপটাভাবেই ব্যাখ্যা করলেন তার সরে দাঁড়ানোর কারণ। তিনি বলেন, আমি জানি এই পদের দায়িত্ব কী, এবং এটাও জানি, দায়িত্ব পালনের মতো যথেষ্ঠ সক্ষমতা এখন আর আমার নেই। জানি, আমার সিদ্ধান্ত নিয়ে অনেক কথাই উঠবে। আসল কারণ কী, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠবে? তবে ছয় বছর বড় বড় চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার পর এখন কেবল এতটুকুই বলতে পারি, রাজনীতিবিদরাও মানুষ। নিজের সর্বোচ্চটুকু দেয়ার পর, মনে হচ্ছে এখনই আমার থামার সময়।
জনপ্রিয় নেত্রীর সরে দাঁড়ানোর ঘোষণায় বিস্মিত নিউজিল্যান্ডের সাধারণ মানুষও। তারা বলছেন, দেশের হয়ে বড় বড় গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছেন জেসিন্ডা। তিনি ভোলোই কাজ করছিলেন। হঠাৎ কেনো সরে দাঁড়াচ্ছেন এ প্রশ্নই এখন সবার মনে। তবে কারণ যাই হোক, তার প্রতি শুভ কামনা জানিয়েছেন নিউজিল্যান্ডের সাধারণ মানুষ।
উন্নত দেশ হলেও সচরাচর বিশ্ব মঞ্চের আলোচনায় থাকে না নিউজিল্যান্ড। সীমান্ত জটিলতা নেই, অপরাধ-প্রবণতাও কম। অভ্যন্তরীন রাজনীতিও স্থিতিশীল। সব মিলিয়ে মোটামুটি নির্ঝঞ্ঝাট মেয়াদ পার করে দেন একের পর এক সরকারপ্রধান। সে তুলনায় অনেক বেশি চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হয়েছে জেসিন্ডা আরডার্নকে। তবে সেসব ভালোভাবেই উতরে গিয়ে নেতৃত্বের দক্ষতায় জয় করেছেন জনগণের হৃদয়। তাই তার এমন আকস্মিক বিদায় জন্ম দিয়েছে অনেক প্রশ্নের।
Copyright Banglar Kontho ©2022
Design and developed by Md Sajibul Alom Sajon