‘ঝিনাইদহ-৪ (কালীগঞ্জ) আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনারের মরদেহ বা শরীরের টুকরাগুলো মামলাটির অন্যতম প্রমাণ। সেটি খুঁজে বের করা এখন মূল লক্ষ্য। ভারতে আসার পর কসাই জিহাদকে নিয়ে তন্নতন্ন করে খুঁজছি আমরা। তবে তার তথ্যেও মেলেনি মরদেহের কোনো অংশ।
আমরা যেভাবেই হোক, তদন্তের অগ্রগতি নিয়েই দেশে ফিরতে চাই।’
গতকাল সোমবার কালের কণ্ঠকে এভাবে বলছিলেন ভারতে যাওয়া ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) তিন সদস্যের প্রতিনিধিদলের একজন। গত রবিবার ডিবির এই দল ভারতে যায়।
ডিবি সূত্র জানায়, জিজ্ঞাসাবাদে বিভ্রান্তিকর তথ্য দিচ্ছেন গ্রেপ্তারকৃতরা।
দলের প্রধান ডিবিপ্রধান পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেন, ‘ভারতে এসে আমরা এমপি আনারের মরদেহ উদ্ধারে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে কাজ চালিয়ে যাচ্ছি। কলকাতায় এসে আমরা প্রথমে ঘটনাস্থলে যাই। এরপর ভারতে গ্রেপ্তার জিহাদ হাওলাদারকেও সঙ্গে নিয়ে এমপি আনারের মরদেহের সন্ধান করি। তবে আমরা এখনো এমপি আনারের মরদেহ বা দেহাবশেষ খুঁজে পইনি।
’ তিনি বলেন, ‘আমার গোয়েন্দা জীবনে এমন নির্মম হত্যাকাণ্ড দেখিনি।’
তিনি বলেন, ‘গ্রেপ্তারকৃতদের তথ্য অনুযায়ী নিউ টাউনসংলগ্ন ভাঙ্গর এলাকার কৃষ্ণমাটি সেতুর কাছে যে জায়গায় বাগজোলা খালে সংসদ সদস্যের মরদেহের টুকরাগুলো ফেলা হয়, সেখানে গেছি। সঞ্জিভা গার্ডেনের সেই ফ্ল্যাটের তথ্য নিয়েছি। এরপর সেখান থেকে পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের সদর দপ্তরে (ভবানী ভবনে) গিয়ে সিআইডির শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করে ঘটনার বিস্তারিত জেনেছি।’
ডিবিপ্রধান বলেন, ‘তদন্তের প্রয়োজনে এরই মধ্যে আমরা নিউ টাউন থানায় মামলার তদন্ত কর্মকর্তাসহ থানার সিনিয়র কর্মকর্তাদের সঙ্গেও বৈঠক করেছি।
নিউ টাউনে সাঞ্জিভা গার্ডেনের ৫৬-বি ইউ ফ্ল্যাটে গিয়ে প্রায় দুই ঘণ্টা সময় সম্ভাব্য খুনের জায়গা, কিছু আলামত খতিয়ে দেখেছি। এরপর যেখানে কসাই জিহাদ (ভারতে গ্রেপ্তার) আনারের দেহের খণ্ডাংশ ফেলেছিল বলে দাবি করে, সেই বাগজোলা খালের সম্ভাব্য জায়গাগুলোয় গিয়ে সন্ধান করেছি। তবে কিছুই পাওয়া যায়নি।’
ফ্ল্যাটের কোথায়, কিভাবে হত্যা করা হয়, মরদেহ কিভাবে খণ্ড খণ্ড করা হয়, কিভাবে বাইরে নেওয়া হয়, এর মধ্যে গ্রেপ্তারকৃতরা তার সবই বর্ণনা করেছেন জানিয়ে ডিবি সূত্র জানায়, ঢাকায় তাদের হাতে গ্রেপ্তার তিন আসামি আমান উল্লাহ আমান ওরফে শিমুল ভূঁইয়া, তানভীর ও শিলাস্তি রহমান। তদন্তের স্বার্থে এই তিন আসামির সঙ্গে কলকাতায় গ্রেপ্তার কসাই জিহাদের ভিডিও কলে কথোপকথনের আয়োজন করা হয়। শিমুল ভূঁইয়া হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় যেসব তথ্য দিয়েছেন, সেগুলো যাচাইয়ের জন্য মূলত কসাই জিহাদকে ভিডিও কলে নেওয়া হয়।
এ ছাড়া কসাই জিহাদ মরদেহের খণ্ডাংশ ফেলার স্থান যেটি দেখিয়েছেন, ঘটনাস্থল আদৌ সত্যি কি না, এটি পরখ করতে এই ভিডিও কলের আয়োজন করা হয়। কথোপকথনের সময় ভারতে অবস্থানরত ডিবির তিন সদস্য এবং কলকাতার পুলিশ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
ডিবিপ্রধান বলেন, ‘আমরা ভারতে তদন্ত শেষে দেশে ফিরে শিলাস্তি রহমানের সঙ্গে কথা বলব। যে ফ্ল্যাটে হত্যাকাণ্ড ঘটে, সেখানে তিনি ছিলেন। কিন্তু সে ক্ষেত্রে তাঁর কী ভূমিকা ছিল, সেটা তাঁর সঙ্গে কথা বলেই জানা যাবে।’
এমপি আনারের মরদেহ পাওয়া না গেলে কোনো ধরনের ডেথ সার্টিফিকেট বা মৃত্যু সনদ জারি করা যাবে না জানিয়ে তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, লাশের ময়নাতদন্তও করা যাবে না। তাঁর আত্মীয়দের কাছেও মৃত্যু সনদ হস্তান্তর করা যাবে না। আর তেমনটি হলে ঝিনাইদহ-৪ (কালীগঞ্জ) আসনে উপনির্বাচন অন্তত সাত বছরের জন্য অসম্ভব হয়ে যাবে।
ডিবি জানায়, তারা এখন পর্যন্ত এমপি আনার হত্যার ঘটনায় তিন আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে। গ্রেপ্তার আসামিরা হলেন আমান উল্লাহ ওরফে শিমুল ভূঁইয়া, শিলাস্তি রহমান ও তানভীর। তিন আসামিকে আট দিনের রিমান্ডে নিয়ে ডিবিতে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে।
রিমান্ডে বিভ্রান্তিকর তথ্য
ডিবি সূত্র জানায়, এমপি আনার হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেপ্তার চরমপন্থী নেতা শিমুল রিমান্ডে একেক সময় একেক তথ্য দিচ্ছেন। এতে তদন্তসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বিভ্রান্তিতে পড়ছেন জানিয়ে ডিবির এক কর্মকর্তা বলেন, শিমুলের তথ্যের ভিত্তিতেই মূলত ভারতে গেছে ডিবির তদন্তদল। এমপি আনারের মরদেহ বা দেহের অংশ উদ্ধার হতে পারে বলে আশা করা হয়েছিল। কিন্তু এখন পর্যন্ত ভারতে এমপি আনারের মরদেহ বা দেহের অংশ উদ্ধার হয়নি।
এ ছাড়া শিমুল আরো অনেক তথ্য দিয়েছেন। সেসব তথ্য যাচাই চলছে। চেতনানাশক প্রয়োগ করে এমপি আনার হত্যার বিষয়ে আপত্তিকর ছবি তোলার বিষয়ে শিমুল যে তথ্য দিয়েছেন, এর সঙ্গে শিলাস্তি রহমানের কথার কোনো মিল পাননি তদন্তসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। শিলাস্তি ডিবিকে জানান, চেতনানাশক দিয়ে অজ্ঞান করে কাউকে হত্যার কোনো ঘটনাই তাঁর জানা নেই।
Copyright Banglar Kontho ©2024
Design and developed by Md Sajibul Alom Sajon