আমেরিকা জুড়ে খৃস্টান সম্প্রদায়ের আনন্দমুখর বড়দিনের আয়োজন এবং পুরো বছর শেষ মুহূর্তের ব্যবসার জন্য অপেক্ষমান কোটি কোটি মানুষের সব পরিকল্পনা ও স্বপ্ন ভেঙে চুরমার করে দিল বেরসিক আবহাওয়া। হাড় কাঁপানো ঠান্ডা, ভয়ংকর তুষার ঝড়, প্রচন্ড বৃষ্টি এবং বিদ্যুৎহীনতা আমেরিকার প্রায় ২০ কোটি মানুষের জীবন দুর্বিসহ করে তোলে। অনেক এলাকা বিপুল তুষারপাতে এবং বৃষ্টির কারণে ডুবে যাওয়ায় খৃস্টান সম্প্রদায়ের মানুষ তাদের বড়দিনের কর্মসূচী বাতিল করতে বাধ্য হয়েছেন। শুক্রবার সন্ধ্যায় এসোসিয়েটেড প্রেস পরিবেশিত খবরে বলা হয় ন্যাশনাল ওয়েদার সার্ভিস বৃহস্পতিবারই এই দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার খবর দিয়ে আমেরিকার ২০০ মিলিয়ন বা ২০ কোটি মানুষকে সতর্কতা দিচ্ছিল। আবহাওয়া দপ্তর জানিয়েছে আমেরিকার ইতিহাসে একসাথে এত বিপুল এলাকায় এইরকম দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া কখনো দেখা যায়নি। সেইসাথে নানা কারণে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে গেলে বিভিন্ন এলাকায় ১৪ লক্ষ বাড়ি ও ব্যবসা অন্ধকারে ডুবে যায়।

এসোসিয়েটেড প্রেস জানাচ্ছে, এই হলিডে সিজনের সবচেয়ে বেশি ফ্লাইট চলাচলের দিন শুক্রবার ও শনিবার আমেরিকায় ১১,০০০ বিমানের ফ্লাইট বাতিল করা হয়েছে। অনেকে বিভিন্ন এয়ারপোর্টে আটকা পড়েছেন। অনেকে আবহাওয়ার কারণে গন্তব্যে পৌঁছতে পারেননি। মেক্সিকো সীমান্তে বিপুল সংখ্যক মাইগ্রেন্ট প্রার্থী প্রচন্ড ঠান্ডায় খোলা আকাশের নিচে কাটাতে বাধ্য হচ্ছে।

বøুমবার্গ নিউজ জানাচ্ছে শুক্রবার দুপুর পর্যন্ত ২৪টি স্টেটে দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া জনজীবনকে স্থবির করে দিয়েছে। সবচেয়ে আঘাতপ্রাপ্ত স্টেটগুলোর মধ্যে রয়েছে নর্থ ক্যারোলাইনা, ইলিনয়, নিউইয়র্ক, নিউজার্সি, কানেকটিকাট, নিউ হ্যাম্পশায়ার, মেইন, ভারমন্ট, পেনসিলভেনিয়া, ওহাইয়ো, মিশিগান, টেনিসি, ইন্ডিয়ানা, মিনেসোটা, মন্টানা, জর্জিয়া। ন্যাশনাল ওয়েদার সার্ভিসের বরাত দিয়ে শুক্রবার বিকেলে ওয়াশিংটন পোস্ট বলছে এই ভয়াবহ আবহাওয়াকে তারা নাম দিয়েছে বোম্ব সাইক্লোন। বোম্ব সাইক্লোন মিড-ল্যাটিট্যুডের ঝড়। এই ঝড়ের এয়ার প্রেসার রেট কমে প্রতি ঘন্টায় ১ মিলিবারে দাঁড়ায় আর এর স্থায়ীত্ব থাকে কমপক্ষে ২৪ ঘন্টা। বোঝার সুবিধার জন্য বলা হয়েছে সাধারণ আবহাওয়ায় এয়ার প্রেসার থাকে ১০১০ মিলিবার।

শুক্রবার বিকেলে নিউইয়র্ক টাইমস বলছে টেক্সাস থেকে মেইন স্টেট পর্যন্ত প্রায় ২,০০০ মাইল জুড়ে এই দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ায় তাপমাত্রা কমে গিয়ে দাঁড়িয়েছে জিরো ডিগ্রি থেকে মাইনাস ২০ ডিগ্রিতে। বৃষ্টিতে ভেসে গেছে অনেক রাস্তা এবং জনপদ, বিশেষ করে সমুদ্র তীরবর্তী এলাকাগুলোতে বন্যার আকার ও ক্ষয়ক্ষতি ব্যাপক। কোনো কোনো অঞ্চলে তুষার ঝড়ে লন্ডভন্ড হয়ে গেছে গাছপালা, বিদ্যুতের পোল, রাস্তায় গাড়ি চলাচল থেমে গেছে। বৃহস্পতিবার ৬,৬০০ ফ্লাইট বাতিল হয়, আর শুক্রবার বিকেল পর্যন্ত তা বেড়ে দাঁড়ায় ১১,০০০ ফ্লাইট।

নিউইয়র্ক টাইমস বলছে, আবহাওয়াজনিত কারণে এ সপ্তাহে কেন্টাকি, ক্যানসাস, ওহাইও ও ওকলাহোমায় কমপক্ষে ১২ ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। অনেকগুলো ইন্টারস্টেট হাইওয়ে বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। আর্কটিক ঠান্ডায়, তুষার ঝড়ে, জলোচ্ছ¡াসে ও বন্যায় আমেরিকার ৬০ শতাংশ মানুষ অর্থাৎ প্রায় ২০ কোটি মানুষ চরম ভোগান্তিতে কাহিল। অনেক স্টেটে এবং কাউন্টিতে জরুরী অবস্থা ঘোষণা করা হয়েছে। ওয়াশিংটন পোস্ট বলছে, ¯েœা ও বৃষ্টি কমে গেলেও শীতের প্রকোপ আপাতত কমার তেমন লক্ষণ নেই। তবে ঝড় ও ঝড়ো হাওয়া কমে যাওয়ায় শীতের কামড় থাকবে না। আমেরিকার এলাকা বিশেষে এই আবহাওয়া বিরাজ করবে কোথাও রবিবার, কোথাও সোমবার আবার কোথাও নিউইয়ার্স ইভ পর্যন্ত।

এই দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ায় বৃহস্পতিবার রাত থেকে নিউইয়র্কের বিভিন্ন এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বিঘিœত হয়। কনএডিসন সাপ্তাহিক বাঙালীতে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানায় তারা ১৬ ঘন্টার মধ্যে ১৩,০০০ বাড়ি ও দোকানপাটের বিদ্যুৎ সরবরাহ ফিরিয়ে এনেছে। শুক্রবার বিকেলে ঝড়ের তোড় বেড়ে যাওয়ায় সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত আরো ১,৭০০ বাড়ি বিদ্যুৎহীনতার কবলে পড়েছে।

কনএডিসন জনগণের উদ্দেশে জানিয়েছেঃ

  • যদি কেউ বিদ্যুতের ছেঁড়া তার দেখে, তারা যেন এর কাছাকাছি না যায়। কারণ এইসব তার স্পর্শ করলে বিদ্যুৎপৃষ্ঠ হওয়ার আশংকা আছে।
  • যেসব এলাকায় ট্রান্সফর্মার ভেঙে রাস্তায় পড়েছে, সেসব ট্রান্সফর্মারও যেন কেউ স্পর্শ না করে।
  • যদি কেউ দেখেন তার গাড়িতে বিদ্যুতের তার ছিঁড়ে পড়েছে, তাহলে যেন একা একা গাড়ি থেকে না বেরিয়ে ফায়ার ডিপার্টমেন্টকে ফোন করে। ফায়ার ফাইটাররা এসে তাকে বা তাদের গাড়ির ভেতর থেকে নিরাপদে বের করবেন।
  • পাওয়ার থাকাকালে যেন সেল ফোনসহ অন্যান্য মোবাইল ডিভাইস চার্জ দিয়ে রাখা হয়।

এ বিষয়ে বিস্তারিত জানতে ভিজিট করা যেতে পারেন  ওয়েবসাইট।