গত শতকের শেষার্ধ। বাতাসে তখন স্নায়ুযুদ্ধের উত্তেজনা। শত্রুপক্ষের তথ্য হাতিয়ে নিতে তৎপর গুপ্তচরেরা। এমনই একজন ছিলেন আনা মন্টেস। তিনি কাজ করতেন যুক্তরাষ্ট্রের একটি গোয়েন্দা সংস্থায়। তবে কিউবার হয়ে গুপ্তচরবৃত্তি করতেন। শেষমেশ ২০০১ সালে মন্টেসকে গ্রেপ্তার করে যুক্তরাষ্ট্র। দীর্ঘ ২০ বছর জেল খাটার পর গত শুক্রবার মুক্তি পেয়েছেন তিনি।
সংবাদমাধ্যম বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, আনা মন্টেস কাজ করতেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা সংস্থায় (ডিফেন্স ইন্টেলিজেন্স এজেন্সি)। সে সময় ২০ বছর ধরে তিনি কিউবার গোয়েন্দাদের হাতে নানা তথ্য তুলে দিয়েছিলেন। মার্কিন কর্মকর্তাদের ভাষায়, কিউবায় যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দাদের তৎপরতার বিষয়ে প্রায় সব তথ্যই ফাঁস করেছিলেন তিনি।
যে গুপ্তচরেরা যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করেছেন, তাঁদের তালিকায় আনা মন্টেসকে রেখেছেন যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা। তাঁদের মধ্যে একজন মিশেল ভ্যান ক্লিয়েভ। যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশের আমলে তিনি কাউন্টার ইন্টেলিজেন্স বা বিদেশি গুপ্তচরদের তৎপরতা ঠেকাতে কাজ করা সংস্থার প্রধান ছিলেন।
২০১২ সালে মার্কিন কংগ্রেসে মিশেল ভ্যান ক্লিয়েভ বলেছিলেন, ‘আমরা কিউবা সম্পর্কে যা যা জানতাম এবং দেশটিতে আমদের যেসব গোয়েন্দা তৎপরতা ছিল, বলতে গেলে তার সবকিছুই মন্টেস কিউবার গোয়েন্দাদের কাছে ফাঁস করে দিয়েছিলেন। ফলে যা হয়েছিল, আমরা কী করছি তা কিউবা ভালোভাবেই জানত। আর সেগুলো নিজেদের সুবিধামতো ব্যবহার করতে পারত।’
মন্টেসকে গ্রেপ্তারের পর তাঁর বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের চারজন গুপ্তচরের পরিচয় এবং বিপুল পরিমাণ গোপন তথ্য ফাঁস করে দেওয়ার অভিযোগ আনা হয়েছিল। বিচার শেষে তাঁর ২৫ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। সাজা খাটার ২০ বছরের মাথায় মুক্তি পেলেও মন্টেসকে এখনো ৫ বছর নজরদারির আওতায় থাকতে হবে। এ সময় ইন্টারনেটে তাঁর কর্মকাণ্ড নজরদারি করা হবে। এ ছাড়া তিনি সরকারি কোনো কাজে অংশ নিতে পারবেন না।
স্নায়ুযুদ্ধের সময় যে গুপ্তচরদের যুক্তরাষ্ট্র গ্রেপ্তার করেছিল, তাঁদের থেকে মন্টেস অবশ্য ব্যতিক্রম ছিলেন। অন্য গুপ্তচরেরা অর্থ বা ব্যক্তিগত স্বার্থের জন্য কাজ করলেও তিনি করেছেন আদর্শের কারণে। সে সময় লাতিন আমেরিকায় যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রিগ্যানের কর্মকাণ্ডের ঘোর বিরোধী ছিলেন মন্টেস। সে কারণেই তিনি নিজ দেশের বিপক্ষে কাজ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলে
মন্টেসের গুপ্তচরবৃত্তি করার আরও একটি কারণ উল্লেখ করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দারা। তাঁরা মনে করেন, নিকারাগুয়ায় কন্ট্রাস নামের একটি ডানপন্থী বিদ্রোহী গোষ্ঠীকে সমর্থন দিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র সরকার। এতে ক্ষুব্ধ ছিলেন মন্টেস। কন্ট্রাসের বিরুদ্ধে নিকারাগুয়ায় যুদ্ধাপরাধসহ নানা নৃশংসতা চালানোর অভিযোগ রয়েছে।
মন্টেসের বয়স এখন ৬৫ বছর। তাঁর আগের মতো ভয়াবহ হয়ে ওঠার সম্ভাবনা কম বলে মনে করছেন মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআইয়ের কর্মকর্তা পিট ল্যাপ। ২০০১ সালে তিনিই মন্টেসকে গ্রেপ্তার করেছিলেন। পিট ল্যাপ বলেন, তাঁর গুপ্তচরবৃত্তি করার অবস্থা আর নেই।
Copyright Banglar Kontho ©2022
Design and developed by Md Sajibul Alom Sajon