যুগ যুগ ধরে পৃথিবীর ইতিহাসে যে সব ব্যক্তি নির্যাতিত, অত্যাচারিত, নিপীড়িত আর অধিকার বঞ্চিত মানুষদের জন্যে সংগ্রাম করে গেছেন, সেই সংগ্রামে নিজের জীবন পর্যন্ত বিসর্জন দিয়েছেন মার্টিন লুথার কিং তাদের মধ্যে অন্যতম।জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত তিনি নির্যাতিত মানুষের জন্যে লড়াই করে গেছেন। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের আটলান্টার জর্জিয়ায় ১৫ই জানুয়ারি, ১৯২৯ সালে জন্ম গ্রহণ করেন। মার্টিন লুথার কিং জুনিয়র এর জন্ম বার্ষিকী উপলক্ষে দিবসটি পালিত হয় প্রতি বছর জানুয়ারি মাসের তৃতীয় সোমবার। এই দিনটি পালিত হয় মার্টিন লুথার কিং ডে। এই দিন আমেরিকায় সরকারি ছুটি।
আমেরিকায় সাদা–কালো ভেদাভেদ দীর্ঘদিনের। একসময় আমেরিকায় কৃষ্ণাঙ্গ মানুষদের সঙ্গে চরম বৈষম্য করা হতো। শ্বেতাঙ্গ মানুষেরা কৃষ্ণাঙ্গদের সঙ্গে মিশতে পারত না। এমনকি শ্বেতাঙ্গ মানুষ বাসে উঠলে কৃষ্ণাঙ্গ মানুষদের সিট ছেড়ে দিতে হতো। শ্বেতাঙ্গরা কৃষ্ণাঙ্গদের সঙ্গে একই রেস্তোরাঁয় খাবার খেতে পারত না। বর্ণ বৈষম্য ছিল প্রকট।
আমেরিকায় তিনিই প্রথম মানুষ যিনি আমেরিকায় কালো মানুষদের প্রতি বৈষম্যের জন্য প্রতিবাদ শুরু করেন।
১৯৬৩ সালের ২৮ আগস্ট তিনি ওয়াশিংটন ডিসির লিঙ্কন মেমোরিয়ালে আড়াই লাখ লোকের সামনে ‘আই হেভ অ্যা ড্রিম’ শীর্ষক তার ঐতিহাসিক ভাষণ দেন। এ ভাষণে আব্রাহাম লিঙ্কনের দাসত্ব প্রথা বিলুপ্ত করার ঘোষণা স্মরণ করে সব ধরনের বর্ণবাদ প্রতিহত করার দাবি জানান তিনি। তিনি বলেছিলেন, “আমার একটি স্বপ্ন, একদিন এই জাতি এই বিশ্বাস নিয়ে বড় হবে যে, সৃষ্টিগতভাবে আমারা সবাই সমান। আমি স্বপ্ন দেখি যে, একদিন দাসের সন্তানেরা ও দাস মালিকের সন্তানেরা একই ভ্রাতৃত্বের টেবিলে বসবে।”
মার্টিন লুথার কিং জুনিয়রের উক্তি ও ব্যক্তিত্বের প্রভাব এতটাই ছিল যে, শেষ পর্যন্ত তাকে গুলি করে হত্যা করা হয়। কারণ তার ভাষণ আর উক্তি গুলোর মাঝে এমন শক্তি ছিল, যা সাধারণ মানুষকে দিন দিন সাহসী থেকে আরও সাহসী করে তুলছিল। এমন সব সত্য তিনি বলতেন– যা সেই সময়কার শাসকগোষ্ঠীর মুখোশ সবার সামনে খুলে দিচ্ছিল। আমেরিকায় আফ্রিকান আমেরিকানদের পূর্ণ নাগরিক অধিকার নিশ্চিত হয়েছিল এই নেতার হাত ধরেই।
আজও মার্টিন লুথারের উক্তি, ভাষণ ও আদর্শ মানুষকে সাহস যুগিয়ে চলেছে, অনুপ্রেরণা দিচ্ছে। হতাশা আর অন্ধকারের মাঝে সাহস আর আশা খুঁজে পাচ্ছে মানুষ তাঁর উক্তি থেকে। যুগ যুগ ধরে বিশ্ববাসীর কাছে ন্যায় ও সাম্য প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে অনুপ্রেরণার প্রতীক হয়ে থাকবেন মার্টিন লুথার কিং জুনিয়র।।
সুব্রত তালুকদার।
সম্পাদক ও প্রকাশক
দৈনিক বাংলার কন্ঠ
Copyright Banglar Kontho ©2022
Design and developed by Md Sajibul Alom Sajon