www.banglarkontho.net
  • ২৭শে জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ , ১২ই শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

    ইন্টারনেটে আসক্ত ৯১ শতাংশ শিক্ষার্থী

    ফাইল ছবি
    শেয়ার করুন

    ইন্টারনেটের কারণে ৯১ শতাংশের বেশি শিক্ষার্থী মানসিক সমস্যায় ভুগছে। এদের মধ্যে ২৬ দশমিক ১ শতাংশ শিক্ষার্থী মনে করে, তাদের সমস্যার ‘পুরোপুরি দায়’ ইন্টারনেটের। আর ‘মোটামুটি দায়ী’ করতে চায় ৫৯ দশমিক ৮ শতাংশ শিক্ষার্থী। বাকিরাও তাদের মানসিক সমস্যার জন্য ইন্টারনেটকে কমবেশি দায়ী মনে করছে। কিন্তু এক্ষেত্রে দায়ী করছে না মাত্র ৮.৩ শতাংশ শিক্ষার্থী। বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা আঁচল ফাউন্ডেশনের এক সমীক্ষায় এসব তথ্য বেরিয়ে এসেছে। শনিবার সংস্থাটি সমীক্ষা প্রতিবেদন প্রকাশ করে।

    সমীক্ষায় ইন্টারনেটসহ মোবাইল-কম্পিউটারের মতো বিভিন্ন ইলেকট্রনিক ডিভাইস (যন্ত্র) ব্যবহারের কারণে শিক্ষার্থীদের সবমিলে ১৬ ধরনের সমস্যা মোকাবিলার তথ্য বের হয়ে এসেছে। মূলত করোনাকালে অনলাইন ক্লাসের নামে শিক্ষার্থীরা ব্যাপকভাবে ইন্টারনেটের সঙ্গে পরিচিত হয়। এ সময় তারা অবাধে ডিভাইস ব্যবহারের সুযোগ পায়। সেটিই তাদের মধ্যে আসক্তি তৈরি করে। ইন্টারনেট ব্যবহারের ক্ষেত্রে ৯১ শতাংশ শিক্ষার্থীই এখন আসক্তি অনুভব করে। সমীক্ষা প্রতিবেদন প্রকাশ উপলক্ষ্যে ভার্চুয়াল মাধ্যমে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লিনিক্যাল সাইকোলজির অধ্যাপক কামাল উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি অধিদপ্তরের প্রোগ্রামার বিপ্লব চন্দ্র সরকার, টাঙ্গাইলের ডেপুটি সিভিল সার্জন ড. মারুফ আহমেদ খান এবং আঁচল ফাউন্ডেশনের প্রেসিডেন্ট তানসেন রোজ।

    প্রতিবেদনে বলা হয়, ইন্টারনেট বর্তমানে জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। প্রতিদিনের কর্মকাণ্ডে ইন্টারনেট কোনো না কোনোভাবে যুক্ত থাকেই। কিন্তু ইন্টারনেট তরুণ শিক্ষার্থীদের জন্য অনেকাংশেই নেতিবাচক ফল নিয়ে আসছে। সমীক্ষায় অংশ নেওয়া ১৭৭৩ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে ৭২.২ শতাংশ জানিয়েছে, তারা তাদের জীবনে কখনো না কখনো মানসিক সমস্যার মুখোমুখি হয়েছে।

    এতে বলা হয়, ৩৮.২ শতাংশ শিক্ষার্থী পড়াশোনাবিষয়ক কাজে ইন্টারনেট ব্যবহার করে। বাকিদের কেউ অবসর সময় কাটাতে, আবার গেম খেলতে বা ভিডিও দেখাসহ অফলপ্রসূ কাজে ইন্টারনেটে বেশি সময় ব্যয় করে। মাত্র ৪২.৯ শতাংশ যোগাযোগের প্রয়োজনে ব্যবহার করে। অপরিমিত ইন্টারনেট ব্যবহার করছে ৬২.৩ শতাংশ শিক্ষার্থী। এদের মাঝে সর্বোচ্চ দিনে ১১ ঘণ্টার ওপরে অনলাইনে থাকা শিক্ষার্থী ৬.২ শতাংশ। আর সর্বনিম্ন ৩২.৩ শতাংশ ব্যবহার করে ২ থেকে ৪ ঘণ্টা।

    সমীক্ষায় অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীদের ৮১.৫ শতাংশের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে ইন্টারনেট। তাদের মধ্যে ৩৪.৩ শতাংশ জানায়, ইন্টারনেটে সময় ব্যয় তাদের স্বাভাবিক জীবনে ‘প্রচণ্ড নেতিবাচক’ প্রভাব ফেলছে। ৫৭.২ শতাংশের স্বাভাবিক জীবনে ‘কিছুটা নেতিবাচক’ প্রভাব ফেলছে। নেতিবাচক প্রভাব বিশ্লেষণে দেখা যায়, ৫৯.৬ শতাংশ মনে করে, ইন্টারনেটে সময় ব্যয় তাদের পড়াশোনায় মনোযোগ বিঘ্নতার জন্য দায়ী। ১৭.৮ শতাংশ ইন্টারনেটে পর্ন দেখা, সাইবার ক্রাইম, বাজি ধরা, বুলিং করা প্রভৃতি অপ্রীতিকর কাজের সঙ্গে সংযুক্ত হয়ে পড়েছে। ২৩ শতাংশ ধীরে ধীরে অন্তর্মুখী হয়ে পড়েছে। ৩৫.৬ শতাংশ ডিপ্রেশনসহ বিভিন্ন ধরনের মানসিক চাপ অনুভব করছে এবং ২০.৩ শতাংশ সামাজিকভাবে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। এছাড়া পড়াশোনায় মনোযোগ হারাচ্ছে তারা।

    সমীক্ষা অনুসারে, পড়াশোনার কাজে ৯৪.১ শতাংশ শিক্ষার্থী ইন্টারনেট ব্যবহার করে। কিন্তু পড়াশোনার ফাঁকে অনলাইনে প্রবেশ করলে ৫২.৬ শতাংশের পড়াশোনার মনোযোগ হারিয়ে যায়। এছাড়াও ২৫.২ শতাংশের পড়া মনে রাখতে অসুবিধা হয়, ৫৭ শতাংশ মনে করে অযথা সময় নষ্ট হয় এবং ৩১.২ শতাংশের পড়াশোনায় অনীহা জন্ম নেয়।

    ইন্টারনেট ব্যবহারের ক্ষেত্রে ৯১ শতাংশ শিক্ষার্থী আসক্তি অনুভব করে। এ কারণে ৩.৫ শতাংশ শিক্ষার্থী ‘কখনোই’ পরিবারের সঙ্গে মন খুলে গল্প করে না। ১৯.২ শতাংশ শিক্ষার্থী জানায়, তারা ‘খুব একটা’ পরিবারের সঙ্গে মন খুলে গল্প করে না। মাঝেমধ্যে পরিবারের সঙ্গে আড্ডা দেয় ৪৪.৬ শতাংশ শিক্ষার্থী। পরিবারের সঙ্গে আড্ডা না দেওয়া শিক্ষার্থী এবং পরিবারের মাঝে একধরনের দূরত্ব তৈরিতে ভূমিকা রাখে। তাদের আত্মকেন্দ্রিক করে তুলেছে। ৬.৫ শতাংশের নৈতিক অবক্ষয় ঘটেছে। ২৪ শতাংশ ব্যক্তিজীবন ও কর্মজীবনে লক্ষ্যচ্যুত হচ্ছে এবং ২৫.৭ শতাংশের অফলপ্রসূ কাজে সময় নষ্ট হচ্ছে বলে জানান।

    ইন্টারনেট আসক্তিতে ঘুম ও শারীরিক সমস্যাও তৈরি করছে। কখনো কখনো অতিরিক্ত সময় ধরে ডিজিটাল ডিভাইসের ব্যবহার এই সমস্যা সৃষ্টি করে। ৫৮.৭ শতাংশ শিক্ষার্থী প্রতিদিন পরিমিত ঘুমায় না। ৩০.৪ শতাংশ এর পেছনে তাদের ইন্টারনেট ব্যবহারকে পুরোপুরিভাবে দায়ী করেছে। ইন্টারনেট ব্যবহার পর্নোগ্রাফিতেও আসক্তি বাড়িয়েছে। ভিডিওর পাশাপাশি যৌন উত্তেজক গল্প শোনা কিংবা পড়া ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের এক অন্যতম আকর্ষণ। ৩২.৯ শতাংশ শিক্ষার্থীই ওয়েবসাইটে এসব দেখে বা পড়ে। আর এ কারণে ৩৫.১ শতাংশ শিক্ষার্থীর মাথায় বিভিন্ন সময় এবিষয়ক চিন্তা আসে। এছাড়া ১৩.৬ শতাংশ শিক্ষার্থী সব সময় এই ধরনের কাজের প্রতি আগ্রহ অনুভব করে, ২৫.৫ শতাংশের মনে নিজেকে নিয়ে হীনম্মন্যতায় ভোগে, ১৫.৩ শতাংশ বিপরীত লিঙ্গের মানুষকে অসম্মানের দৃষ্টিতে দেখে, ১০.৫ শতাংশ অনৈতিকভাবে যৌনতৃপ্তি উপভোগ করে। তথ্য বিশ্লেষণে জানা যায়, ২৮.৮ শতাংশ শিক্ষার্থী যৌনতা সম্পর্কিত কৌতূহল মেটাতে এই ধরনের কাজ করে থাকে। ২৪ শতাংশ জানায়, তারা যৌনতৃপ্তি পেতে এবং ১৪.১ শতাংশ অবসরের খোরাক হিসাবে এই প্রকার কাজকর্ম করে। এছাড়াও, যৌনজীবন নিয়ে বিষণ্নতা থেকে ৯.৬ শতাংশ এবং একাকিত্ব ঘোচাতে ২৩.৫ শতাংশ এমন কাজ করে।

    ইলেকট্রনিক ডিভাইস শিক্ষার্থীদের আচরণেও পরিবর্তন এনেছে। বিশেষ করে ২৭ শতাংশ শিক্ষার্থীর ধৈর্যশক্তির হ্রাস ঘটেছে। ২৬ শতাংশ হঠাৎ রেগে যায়, ২৭.৭ শতাংশ চুপচাপ হয়ে যায়, ২২.৫ শতাংশের ভেতর জড়তা তৈরি হয়, ২৪.৫ শতাংশের মধ্যে অবাস্তব প্রত্যাশা তৈরি হয় এবং ২৩.৬ শতাংশ ঘরকুনো হয়ে যায়। অন্যদিকে ৩০.২ শতাংশ শিক্ষার্থী মনে করে, তারা যখন অফলাইনে থাকে, তখন একাকিত্বে ভোগে। ২২.২ শতাংশের মাঝেমধ্যে একাকিত্ব অনুভূত হলেও ১৭.৩ শতাংশ বিষয়টি নিয়ে কখনো ভেবে দেখেনি বলে জানিয়েছে। আঁচল ফাউন্ডেশনের প্রেসিডেন্ট তানসেন রোজ বলেন, বিশ্বায়নের যুগে ইন্টারনেট ব্যবহার না করলে আমাদের তরুণ প্রজন্মই পিছিয়ে পড়বে। কিন্তু সমীক্ষা অনুযায়ী তারা ইন্টারনেটকে বিনোদনের মাধ্যম হিসাবে ব্যবহার করতে চায়। কারণ, আমাদের দেশে বিনোদনের ক্ষেত্রগুলো প্রায়ই সংকীর্ণ হয়ে গেছে।

    অধ্যাপক কামাল উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী বলেন, সমীক্ষায় কিছু ক্ষেত্রে আশঙ্কার চিত্র ফুটে উঠেছে, যা আমাদের ভাবতে সহায়তা করবে। সেটি হচ্ছে-আসলেই ইন্টারনেটের ব্যবহার এ বয়সি মানুষের উপকার করছে নাকি অপকারটাই বয়ে নিয়ে আসছে। সমস্যা সমাধানে সংস্থাটি ১০টি সুপারিশ তুলে ধরেছে। এর মধ্যে আছে-ইন্টারনেটের সঠিক ব্যবহার নিশ্চিতে স্কুল, কলেজগুলোয় ‘ডিজিটাল লিটারেসি প্রোগ্রাম’ চালু করা। ইন্টারনেট রেসকিউ ক্যাম্প স্থাপনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের আসক্তি কাটিয়ে উঠতে কাউন্সেলিং, থেরাপি এবং শিক্ষামূলক প্রোগ্রাম প্রদান করা। সামাজিক ও পারিবারিক যোগাযোগে ইন্টারনেট নির্ভরতার পরিবর্তে সরাসরি যোগাযোগকে উৎসাহিত করতে প্রচারণা চালানো। বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনকে নিয়ে ডিজিটাল লিটারেসির প্রশিক্ষণ দেওয়া। একাডেমিক পর্যায়ে আত্মসচেতনতামূলক (সেলফ কেয়ার অ্যাক্টিভিটিস) কার্যক্রম পরিচালনা করা। খেলাধুলা ও ব্যায়ামাগারের সহজলভ্যতা নিশ্চিত করা। সামাজিক যোগাযোগ বৃদ্ধিতে সোশ্যাল স্কিল ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা করা। যৌনবিষয়ক সঠিক পাঠ নিশ্চিত করা। সাইবার ক্রাইম বিষয়ে সচেতনতামূলক কার্যক্রম জোরদার করা

    এস এ

    • সর্বশেষ

    বিক্ষোভে উত্তাল টাইমস স্কয়ার নিউইয়র্কসহ যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন স্থানে সমাবেশে যোগ দিলেন ক্ষুব্ধ প্রবাসীরা

    জুলাই ২৭, ২০২৪ ১০;৩০ পূর্বাহ্ণ

    নেতানিয়াহুকে যুদ্ধ বন্ধ করতে বললেন কমলা হ্যারিস

    ১০;২৭ পূর্বাহ্ণ

    কমলা হ্যারিসকে সমর্থন দিলেন ওবামা ও মিশেল

    ১০;২২ পূর্বাহ্ণ

    কানাডায় অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে বাংলাদেশি আশ্রয়প্রার্থী

    ১০;১৩ পূর্বাহ্ণ

    ‘নিরাপত্তার স্বার্থে’ ডিবি হেফাজতে ৩ সমন্বয়ক

    ১০;১০ পূর্বাহ্ণ

    জনপ্রিয়তায় সমানে সমান ট্রাম্প-কমলা

    ৯;৫৫ পূর্বাহ্ণ

    জনপ্রিয়তায় সমানে সমান ট্রাম্প-কমলা

    ৯;৩৯ পূর্বাহ্ণ

    কারফিউ তুলে নেওয়ার বিষয়ে যা জানালেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

    ৯;৩৬ পূর্বাহ্ণ

    প্রতিটি হত্যাকাণ্ডের বিচার হবে : কাদের

    ৩;৫২ পূর্বাহ্ণ

    সরকার পতনের দাবিতে জাতীয় ঐক্যের ডাক বিএনপির

    ৩;৪৮ পূর্বাহ্ণ

    অলিম্পিক শুরুর আগে প্যারিসে রেলে ‘নাশকতা’

    ৩;৪৬ পূর্বাহ্ণ

    হিটলার-নেতানিয়াহুর তুলনা, জাতিসংঘ বিশেষজ্ঞকে ইসরায়েলের তিরস্কার

    ২;০০ পূর্বাহ্ণ

    মার্কিন নির্বাচনের আগেই ইসরায়েল-সৌদি আরব চুক্তি সম্ভব?

    ১;৫৬ পূর্বাহ্ণ

    চিরুনি অভিযান, সাত দিনে দেশজুড়ে প্রায় ৬ হাজার গ্রেপ্তার

    ১;৪৫ পূর্বাহ্ণ

    আওয়ামী লীগের সমন্বয় সভা ভুয়া ভুয়া ধ্বনিতে স্থগিত

    জুলাই ২৬, ২০২৪ ১০;৪৯ অপরাহ্ণ

    জরুরি নন, কর্মী বাংলাদেশ ছাড়তে বলেছে যুক্তরাষ্ট্র

    ১০;৪৫ অপরাহ্ণ

    পাকিস্তানের ইসলামাবাদ ও পাঞ্জাবে ১৪৪ ধারা জারি

    ১০;৪২ অপরাহ্ণ

    কেউ যেন আইন ফাঁকি দিতে না পারে সেই ব্যবস্থা করা হবে: পররাষ্ট্রমন্ত্রী

    ১০;১৮ অপরাহ্ণ

    ইরানকে পৃথিবী থেকে নিশ্চিহ্ন করার হুমকি ট্রাম্পের

    ১০;৩৪ অপরাহ্ণ

    অলিম্পিকের পূর্বে দ্রুতগতির রেল নেটওয়ার্কে হামলায় প্যারিসে বিপর্যয়

    ১০;৩৩ অপরাহ্ণ

    Copyright Banglar Kontho ©2024

    Design and developed by Md Sajibul Alom Sajon


    উপরে