এক দশকের বেশি সময় ধরে চলছে সিরিয়া যুদ্ধ। এই যুদ্ধের একটি পক্ষ তুরস্ক। বহুদিন ধরেই দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক ভাল নেই। তবে এবার দুই দেশের সম্পর্কোন্নয়নে মধ্যস্ততা করছে রাশিয়া। বুধবার দেশটির রাজধানী মস্কোতে ১১ বছর পর প্রথম বৈঠকে বসেন সিরিয়া ও তুরস্কের প্রতিরক্ষামন্ত্রীরা।
এরপরই নতুন করে আঙ্কারা এবং দামেস্কের মধ্যে সম্পর্ক স্বাভাবিক হওয়ার সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে। আল-জাজিরার খবরে জানানো হয়, তুরস্কের পক্ষ থেকে আলোচনায় যোগ দেন দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী হুলুসি আকার এবং গোয়েন্দা প্রধান হাকান ফিদান। অপরদিকে সিরিয়ার পক্ষ থেকে মস্কো যান প্রতিরক্ষামন্ত্রী আলী মাহমুদ আব্বাস এবং গোয়েন্দা প্রধান আলী মামলুক। রুশ প্রতিরক্ষামন্ত্রী সের্গেই সইগু আলোচনা শেষে জানিয়েছেন, সিরিয়া সংকট, তুরস্কের শরণার্থী সংকট এবং সন্ত্রাসী দমন ইস্যুতে আলোচনা হয়েছে। তিন দেশ এক হয়ে সিরিয়ার সন্ত্রাসীদের মোকাবেলা করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। সিরিয়াসহ গোটা অঞ্চল যাতে স্থিতিশীল থাকে তা নিশ্চিতে আবারও দফায় দফায় এমন ত্রিপক্ষীয় বৈঠক আয়োজনে সম্মত হয়েছে তিন দেশ। তুরস্কের কর্মকর্তারা বলছেন, এখনই সময় সিরিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার।
দুই দেশ এরইমধ্যে গোয়েন্দা পর্যায়ে যোগাযোগ শুরু করেছে। তবে এখনও দুই দেশের মধ্যে বেশ কিছু ইস্যুতে ভিন্ন মত রয়েছে। দামেস্ক চায়, সিরিয়ার ভূখণ্ডে কোনো তুর্কি সেনা থাকতে পারবে না। অপরদিকে তুরস্কের দাবি, সিরিয়ার শরণার্থীদের নিরাপদে ফিরিয়ে আনতে হবে।
তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েফ এরদোগান এ মাসে জানান যে, তিনি সিরিয়ার সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক এগিয়ে নিতে চান এবং এ জন্য তিনি রাশিয়াকে ত্রিপক্ষীয় কাঠামো দাড় করানোর প্রস্তাব দেন। এমনকি শিগগিরই তিনি সিরিয়া সফরে যেতে পারেন বলেও জানিয়েছেন এরদোগান। সেখানে প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের সঙ্গে কথা বলবেন তিনি।
গত মাসে ইস্তাম্বুলে ভয়াবহ বোমা হামলার পর ঘটনার প্রতিশোধ হিসেবে তুরস্ক সিরিয়ার অভ্যন্তরে বিমান হামলা শুরু করে। এরদোগান ঘোষণা দেন, আঙ্কারা উত্তর সিরিয়ায় অবস্থিত ওয়াইপিজি যোদ্ধাদের লক্ষ্যবস্তুতে স্থল অভিযান চালাবে। আঙ্কারা কুর্দিস্তান ওয়ার্কার্স পার্টিকে (পিকেকে) সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে দেখে। তাদেরই একটি শাখা ওয়াইপিজি যোদ্ধারা। এটি একটি সশস্ত্র গোষ্ঠী যা ১৯৮০ সাল থেকে তুর্কি রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে।
তুরস্কের প্রেসিডেন্ট বলেন, তুরস্ক তার দক্ষিণ সীমান্তে নিরাপত্তা করিডোর দিয়ে সুরক্ষিত করতে আগের চেয়ে আরও বেশি দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। তুরস্ক তার প্রতিবেশি সিরিয়া এবং ইরাক উভয়ের আঞ্চলিক অখণ্ডতা নিশ্চিত করতে চায়। এখন আঙ্কারা এবং দামেস্কের মধ্যে সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণ সেই সম্ভাবনা আরও জোরদার করবে। পাশাপাশি দশকব্যাপী চলা বিধ্বংসী সিরিয়ার যুদ্ধও নতুন আকার পাবে। রাশিয়া এবং ইরানের সহায়তায় প্রেসিডেন্ট আল-আসাদের বাহিনী সিরিয়ার বেশিরভাগ অঞ্চল ফিরিয়ে এনেছে। তবে গোটা সিরিয়ার নিয়ন্ত্রণ পেতে তুরস্কের সমর্থন জরুরি ছিল।
Copyright Banglar Kontho ©2022
Design and developed by Md Sajibul Alom Sajon