নিউইয়র্কে সাধারণ মানুষের ঘরের ভেতরও ডিজিটাল নজরদারি বা গুপ্তচরবৃত্তি চালাচ্ছে সিটি পুলিশের ড্রোন। নিউইয়র্ক সিটির পাঁচটি বৃহত্তম পৌরসভার আকাশ থেকে তাদের ড্রোনগুলো পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। নিউইয়র্ক পুলিশ ডিপার্টমেন্টসহ অন্য কয়েকটি এজেন্সি তাদের এসব কর্মসূচি কার্যকর করছে ড্রোনের মাধ্যমে। ইতিমধ্যেই নিউইয়র্ক সিভিল লিবার্টিজ ইউনিয়ন এই গুপ্তচরবৃত্তিকে সাধারণ মানুষের প্রাইভেসিতে আঘাত বলে উল্লেখ করেছে।
জানা যায়, রাস্তায় চলাচলসহ সাইড ওয়াকে দাঁড়িয়ে কথা বলা, ওপেন স্পেসে সমাবেশসহ অ্যাপার্টমেন্ট বিল্ডিংয়ের জানালা দিয়েও বায়োমেট্রিক সারভাইল্যান্স প্রযুক্তির মাধ্যমে ফেশিয়াল রিকগনিশন, গেট বা চলাফেরা রিকগনিশন, ইমোশন রিকগনিশন অথবা আচরণ রিকগনিশন করা হচ্ছে।
সিভিল লিবার্টিজ ইউনিয়নের বরাত দিয়ে গণমাধ্যম লিখছে, বর্তমানে কমপক্ষে ৩৩টি সরকারি মালিকানাধীন ড্রোন প্রায় নিউইয়র্ক সিটির আকাশে খুব নিচু দিয়ে উড়ে যাচ্ছে। এসব ড্রোনের মধ্যে ১৯টি নিউইয়র্ক পুলিশ ডিপার্টমেন্টের। পুলিশের এই ডিজিটাল গুপ্তচরবৃত্তির নিউইয়র্ক সিভিল লিবার্টিজ ইউনিয়ন কোনো নিয়মতান্ত্রিক রেগুলেশন খুঁজে পায়নি। বরং তা সাধারণ মানুষের প্রাইভেসিতে আঘাত হানছে বলে অভিযোগ করেছে। বিশেষ করে অ্যাপার্টমেন্টের পাশ দিয়ে উড়ে জানালা দিয়ে ভেতর দেখাকে তারা মেনে নিতে পারছে না। তা ছাড়া রাস্তায় চলাফেরাতেও আর মানুষের স্বাধীনতা থাকছে না বলে উল্লেখ করেছে।
সিভিল লিবার্টিজ ইউনিয়নের গবেষণায় বলা হয়েছে, এসব ড্রোন উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন এবং মিলিটারি গ্রেডের টেকনোলজি। তাদের গবেষণায় উঠে এসেছে, নিউইয়র্ক স্টেটের বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠান সম্প্রতি ৫৩০টি ড্রোনের রেজিস্ট্রেশন করেছে। এর মধ্যে ৩২৭টি ব্যবহার করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী প্রতিষ্ঠান।
উল্লেখ্য, নিউইয়র্ক সিটিতে কোনো প্রাইভেট এবং কমার্শিয়াল ড্রোন ব্যবহার বা অপারেশন নিষিদ্ধ। তবে নিউজার্সিতে সম্প্রতি যে ৫০০টি ড্রোন ব্যক্তিগত ও কমার্শিয়াল ব্যবহারের অনুমতি দেওয়া হয়েছে, তা এতই উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন যে হাডসন নদীর নিউজার্সি তীর থেকে তা ম্যানহাটানকে পর্যবেক্ষণ করতে পারে। এসব ড্রোন মাঝে মাঝে হাডসন নদী পার হয়ে নিউইয়র্কের সীমান্তেও ঢুকে পড়ে।
সিভিল লিবার্টিজ ইউনিয়ন বলছে, ড্রোনের মাধ্যমে পাওয়া বায়োমেট্রিক তথ্য যদি ভুলও হয়, তবু এনওয়াইপিডির সদস্যরা তা বিশ্বাস করে এবং ওই তথ্যের ভিত্তিতে গ্রেফতার করে।
সম্প্রতি নিউইয়র্ক সিটিতে অপরাধ বহুলাংশে বেড়ে যাওয়ায় মেয়র এরিক অ্যাডামস উচ্চ অপরাধপ্রবণ এলাকার বিভিন্ন ভবনের ছাদ থেকে ড্রোনের মাধ্যমে গুপ্তচরবৃত্তির অনুমতি দেওয়ার খবরটি ফাঁস করে দেয় নিউইয়র্ক পোস্ট।
নিউইয়র্ক সিভিল লিবার্টিজ ইউনিয়ন এই গবেষণার পরিপ্রেক্ষিতে এনওয়াইপিডির কাছ থেকে তাদের ড্রোনের সারভাইল্যান্সে ধরা পড়া তথ্যসমূহ পাবলিক রেকর্ড হিসেবে প্রকাশের অনুরোধ জানিয়েছে।
সিভিল লিবার্টিজ ইউনিয়নের কর্মকর্তারা স্টেট আইনপ্রণেতাদের অনুরোধ জানিয়েছেন, তারা যেন এই মর্মে বিল পাস করেন যে ড্রোনের মাধ্যমে কোনো প্রতিবাদ সভায় গুপ্তচরবৃত্তি করা যাবে না। সেই সাথে যেকোনো ড্রোন-সার্চের আগে যেন তারা আদালতের ওয়ারেন্ট নিয়ে নেয় এবং ফেশিয়াল রিকগনিশন সফটওয়্যার ব্যবহার নিষিদ্ধ করে।
Copyright Banglar Kontho ©2022
Design and developed by Md Sajibul Alom Sajon