মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের ব্যক্তিগত বাড়ি ও পুরনো দপ্তর থেকে কয়েক দফা গোপন নথি উদ্ধারের পর বিশ্লেষকরা সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের রিসোর্ট থেকে নথি জব্দের বিষয়টির সঙ্গে এর তুলনা করছেন। পাশাপাশি এখনো অজানা অনেক প্রশ্নের উত্তর খুঁজছেন তাঁরা।
নথির সংখ্যা, ধরন ও প্রাপ্তিস্থান
জো বাইডেনের পুরনো দপ্তর থেকে ১০টি গোপন নথি উদ্ধার হয়। তার মধ্যে কয়েকটি অতি গোপনীয়। সেগুলোতে ইউক্রেন, ইরান ও যুক্তরাজ্য সম্পর্কে গোয়েন্দা তথ্য ছিল। আর ডেলাওয়ার অঙ্গরাজ্যে প্রেসিডেন্টের নিজের বাড়ি থেকে দুই দফায় উদ্ধার হয়েছে ১২টি নথি। সেগুলো সম্পর্কে বিস্তারিত জানা যায়নি।
অন্যদিকে ট্রাম্পের রিসোর্ট থেকে উদ্ধার হয়েছিল প্রায় ৩২৫টি গোপন নথি। তার মধ্যে ৬০টিরও বেশি ছিল অতি গোপনীয়।
দুজনের কাছ থেকে উদ্ধার হওয়া নথিতেই গোয়েন্দা সংস্থার বিভিন্ন প্রতিবেদন ছিল বলে জানিয়েছে সিএনএন। সেখানে গোয়েন্দা সংস্থার কাজের ধরন ও বিভিন্ন সূত্রের তথ্য আছে। যা ফাঁস হলে জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি সৃষ্টি করতে পারে।
তদন্ত শুরু
ওয়াশিংটনে বাইডেনের সাবেক গবেষণা প্রতিষ্ঠানের দপ্তর পরিষ্কারের সময় সেখানে নথিগুলো পান তাঁর আইনজীবীরা। ডেলাওয়ারের বাড়ি থেকেও তাঁর আইনজীবীরাই নথি উদ্ধার করেন। সেগুলো সঙ্গে সঙ্গেই গোপন নথির নির্ধারিত জায়গা জাতীয় আর্কাইভে জমা দেওয়া হয়। তবে নথি নভেম্বরের মধ্যবর্তী নির্বাচনের আগে উদ্ধার হলেও তা জানুয়ারিতে জনসমক্ষে আনায় বাইডেনের স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। কারণ তখন বিষয়টি ফাঁস হলে হয়তো নির্বাচনের ফলাফলেও প্রভাব ফেলত।
অন্যদিকে গোপন নথি জমা দেওয়া হয়নি এই কথা বলে ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল জাতীয় আর্কাইভ কর্তৃপক্ষ। এরপর ট্রাম্প কিছু নথি জমা দিলেও পুরোপুরি সহযোগিতা করা হয়নি বলে সন্দেহ করে তার রিসোর্টে তল্লাশি চালায় এফবিআই।
উদ্ধারের পর মন্তব্য
নথি জব্দের পরপরই ট্রাম্প অভিযোগ করে বলেছিলেন, পরবর্তী প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে তাঁকে প্রার্থী হওয়া থেকে বিরত রাখতেই রাজনৈতিক উদ্দেশ্য থেকে তল্লাশি চালিয়েছে বিচার বিভাগ ও এফবিআই।
এখন বাইডেনের গোপন নথি উদ্ধারের পর ট্রাম্প প্রশ্ন তুলে বলেন, প্রেসিডেন্টের বাড়িতে এফবিআই তল্লাশি চালাবে কখন?
অন্যদিকে বাইডেন জানান, দপ্তরে ও বাড়িতে নথি পাওয়া যাওয়ায় তিনি অবাক হয়েছেন এবং তদন্তকারীদের পূর্ণ সহযোগিতা করছেন। গোপন নথি সম্পর্কে তিনি যথেষ্ট সতর্ক বলেও মন্তব্য করেন প্রেসিডেন্ট।
বিশেষ পরামর্শক নিয়োগ
দুই ঘটনা তদন্তেই বিশেষ পরামর্শক নিয়োগ দিয়েছে বিচার বিভাগ। ট্রাম্পের ঘটনা তদন্ত করছেন সাবেক অপরাধবিষয়ক আইনজীবী জ্যাক স্মিথ। আর বাইডেনের ঘটনা তদন্ত করছেন ট্রাম্প প্রশাসনে নিয়োগ পাওয়া আইনজীবী রবার্ট হুর।
এখনো অজানা যেসব উত্তর
বাইডেনের পুরনো দপ্তরে পাওয়া নথিতে কয়েকটি দেশ সম্পর্কে গোয়েন্দা সংস্থার তথ্য ছিল বলে জানা গেছে। তবে ডেলাওয়ারের বাড়িতে তিন দফায় পাওয়া নথিতে ঠিক কী আছে সে বিষয়ে বিস্তারিত কোনো তথ্য এখনো পাওয়া যায়নি। এ ছাড়া জো বাইডেন ভাইস প্রেসিডেন্টের পদ ছাড়ার পর গত সাত বছর নথিগুলো সামলানো ও সংরক্ষণের দায়িত্ব কাদের ওপর ছিল সে বিষয়টিও এখনো স্পষ্ট নয়। তদন্তকারীরা জানতে চাইছেন নথিগুলো ঠিক কতটা নিরাপদ অবস্থায় ছিল।
মধ্যবর্তী নির্বাচনের এক সপ্তাহ আগে বাইডেনের হেফাজত থেকে প্রথম দফায় নথি উদ্ধার হয়। কাজ শেষে এগুলো আর্কাইভে ফেরত দেওয়ার কথা ছিল। উদ্ধারের পরের দিন সেগুলো বিচার বিভাগ ও আর্কাইভে জমা দেওয়া হয়। কিন্তু জানুয়ারির আগে এ বিষয়ে কিছু জানায়নি হোয়াইট হাউস। রিপাবলিকান নেতাদের অভিযোগ, নির্বাচনের আগে প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হবে ও সরকারের ওপর ভরসা কমে যাবে, এমন শঙ্কায় গোপন রাখা হয়। অন্যদিকে ডেমোক্র্যাটরা বিষয়টি গোপন রাখাকে সাধারণ ঘটনা বলছেন।
সূত্র : বিবিসি, এএফপি
Copyright Banglar Kontho ©2022
Design and developed by Md Sajibul Alom Sajon