গত মাসে রাশিয়ার তেলসহ জ্বালানি পণ্য আমদানিতে নির্দিষ্ট মূল্যসীমা বেধে দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। এই শর্তে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ না হওয়া সত্ত্বেও পাকিস্তানকে বিশেষ সুবিধা দিতে যাচ্ছে মার্কিন প্রশাসন। নিষেধাজ্ঞা থাকলেও রাশিয়ার কাছ থেকে ছাড়ের মূল্যে তেল কিনতে পারবে পাকিস্তান, ওয়াশিংটন একথা জানিয়ে দিয়েছে।
অন্যদিকে মার্কিন ডলার বাদেই ‘বন্ধুপ্রতিম কোনো দেশের মুদ্রায়’ পাকিস্তানকে তেলের দাম পরিশোধের সুযোগ দেওয়ার কথা জানিয়েছে রাশিয়া। আগামী মার্চ থেকে পাকিস্তানে অপরিশোধিত তেল রপ্তানি করবে দেশটি। এ ঘটনায় অনেকেই মনে করছেন, রাশিয়ার সঙ্গে পাকিস্তানের আলাদা একটি বোঝাপড়া তৈরি হয়েছে, যা ইউক্রেন যুদ্ধে পাকিস্তানের অবস্থান পরোক্ষভাবে তুলে ধরে।
পাকিস্তানের রিজার্ভ প্রায় সাড়ে চার বিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছে, যা দিয়ে সর্বসাকুল্যে হয়তো তিন সপ্তাহের আমদানি ব্যয় মেটানো সম্ভব। মারাত্মক ডলার সংকটে থাকা পাকিস্তানের জন্য ভিন্নমুদ্রায় রাশিয়ার তেল কিনতে পারাটা এই মুহূর্তে বড় ধরনের আশীর্বাদই বটে। সম্প্রতি এ প্রসঙ্গে আলোচনা করতে রাশিয়ার ৮০ সদস্যের প্রতিনিধিদল পাকিস্তান ঘুরে গেছে। প্রতিনিধি দলটি ১৮ থেকে ২০ জানুয়ারি পাকিস্তানে অবস্থান করে। প্রতিনিধি দলের নেতৃত্বও দেন রাশিয়ার জ্বালানিমন্ত্রী নিকোলাই সুলগিনোভ।
ভারতের কয়েকটি সংবাদমাধ্যম বলছে, কিছুদিন আগে ইউক্রেনে অস্ত্রশস্ত্র পাঠিয়েছে পাকিস্তান। ওই অস্ত্র ইউক্রেন সম্মুখসমরে ব্যবহারও করছে বলে জানা যাচ্ছে। তাছাড়া, পাকিস্তান ও ইউক্রেনের সামরিক সখ্যতা নতুন নয়। এর আগে পাকিস্তানকে এমআই-১৭ হেলিকপ্টারের উন্নয়নে সাহায্য করে ইউক্রেন। এই হেলিকপ্টারের নির্মাতা রাশিয়া হলেও উভয় দেশ একত্রে থাকার দিনগুলোয় এর যন্ত্রাংশ তৈরিতে ইউক্রেন কাজ করে। সোভিয়েত সামরিক সরঞ্জাম শিল্পের ১৭ শতাংশই তখন ইউক্রেনে ছিল।
রাশিয়ার প্রতিনিধিদল গত সপ্তাহে যেদিন পাকিস্তানে আসে, সেদিন ভারতের ফার্স্টপোস্টে প্রকাশিত লেখায় বিশ্লেষক সুদীপ শর্মা বলেন, ‘ডলার সংকটে থাকা যে পাকিস্তান সপ্তাহ কয়েক আগে ইউক্রেনে অস্ত্রের চালান পাঠিয়ে রাশিয়ার পিঠে ছুরি চালাল। রিজার্ভের ডলার বাঁচাতে এবং আকাশমুখী জ্বালানির দাম নিয়ন্ত্রণে সেই পাকিস্তানই এখন মস্কো থেকে আসা মন্ত্রীদের সঙ্গে তেল আমদানি নিয়ে আলোচনার জন্য অপেক্ষা করছে।’
সুদীপ শর্মা তার লেখায় পাকিস্তানকে ‘রাশিয়ার পিঠে ছুরিকাঘাতকারী’ হিসেবে আখ্যায়িত করলেও রাশিয়া এখন ঠিকই ছাড়ের মূল্যে পাকিস্তানে তেল রপ্তানি করতে যাচ্ছে। কূটনীতির মাঠে পাকিস্তানের নতুন সরকার এক্ষেত্রে কিছুটা সুবিধাজনক অবস্থান তৈরি করতে পেরেছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
পাকিস্তানের সংবাদপত্র ডনে প্রকাশিত দেশটির সাবেক পররাষ্ট্র সচিব জলিল আব্বাস জিলানি ও ব্যাংক অব পাঞ্জাবের প্রধান নির্বাহী জাফর মাসুদের লেখায় অবশ্য বলা হয়, ‘জ্বালানি খাতের অবকাঠামো নির্মাণে রাশিয়ার সঙ্গে বড় পরিসরে কাজ করার সম্ভাবনা রয়েছে পাকিস্তানের।’
বর্তমান চিত্র দেখে মনে হচ্ছে, রাশিয়ার সঙ্গে এই সম্ভাবনা নিয়ে কাজ করতে শুরু করে দিয়েছে পাকিস্তান। একইসঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র নেতৃত্বাধীন পশ্চিমা জোট এবং রাশিয়াকে ম্যানেজ করে পাকিস্তান কতটা জ্বালানি মূল্যের ফাঁড়া কাটিয়ে উঠতে পারে, সেটিই দেখার বিষয়।
Copyright Banglar Kontho ©2022
Design and developed by Md Sajibul Alom Sajon