ইউক্রেনের নিরন্তর দেনদরবারের পর অবশেষে জার্মানি ও যুক্তরাষ্ট্র পর পর তাদের লেপার্ড ২ ও এম১ অ্যাব্রামস ট্যাংক দিতে সম্মতির কথা জানিয়েছে। বুধবার জার্মানির আইনসভায় চ্যান্সেলর ওলাফ শোলজ লেপার্ড ২ দেওয়ায় সম্মতির কথা জানানোর পর একই দিন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন তাঁদের প্রধান যুদ্ধ ট্যাংক (এমবিটি) অ্যাব্রামস দেওয়ার সিদ্ধান্তের কথা জানান।
ইউক্রেনের জন্য এই খবর স্বস্তির হলেও ট্যাংকগুলো হাতে পেতে সময় লাগবে। এজন্য ইউক্রেনীয় সেনাদের প্রশিক্ষণও লাগবে। এ কারণে হুট করেই যুদ্ধের চেহারা পাল্টানোর আশা নেই।
ইউক্রেনের যুদ্ধক্ষেত্রের জন্য অ্যাব্রামস ট্যাংকের উপযুক্ততা নিয়ে মার্কিন প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় পেন্টাগনে নানা বিতর্ক চলে। তবে শেষ পর্যন্ত ৩১টি ট্যাংক সরবরাহের ঘোষণা দিয়েছে ওয়াশিংটন। এর কিছু আগে প্রথম দফায় ইউক্রেনে ১৪টি লেপার্ড ২ ট্যাংক পাঠানোর ঘোষণা দেয় বার্লিন।
এসব ট্যাংকের গোলার পাল্লা বেশি বলে তা রুশ বাহিনীকে ঠেকিয়ে রাখতে বা পিছু হটাতে ইউক্রেনকে সহায়তা করবে বলে আশা করা হচ্ছে। পশ্চিমা উন্নত ট্যাংকগুলোর আছে গতি, নির্ভুলতাসহ আরো কিছু সুবিধাও। ইউক্রেনের ব্যবহূত ট্যাংকগুলোর বড় অংশ সাবেক সোভিয়েত আমলের যা সেকেলে বলেই স্বীকৃত।
রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র হামলা প্রতিহতের পাশাপাশি হারানো ভূখণ্ড উদ্ধারে ইউক্রেনের অস্ত্রভাণ্ডার সমৃদ্ধ করতে এসব যুদ্ধাস্ত্র সরবরাহ করছে কিয়েভের পশ্চিমা মিত্ররা। রিজার্ভ সেনা প্রশিক্ষণের পর রাশিয়ার তীব্র আক্রমণের আশঙ্কাও করা হচ্ছে। তবে অস্ত্র পরিচালনায় প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ না থাকায় এখনই ট্যাংকগুলো কাজে লাগাতে পারছে না ইউক্রেন।
যত দ্রুত সম্ভব ইউক্রেন যুদ্ধে ট্যাংকগুলো পাঠানোর আগ্রহ জানিয়েছে বার্লিন। সরকারের বিবৃতিতে জানানো হয়, ‘ইউক্রেনের ক্রুদের প্রশিক্ষণ জার্মানিতে দ্রুত শুরু হবে। প্রশিক্ষণের পাশাপাশি গোলাবারুদ এবং ট্যাংকের রক্ষণাবেক্ষণকাজ শেখানো হবে।’
জার্মানির প্রতিরক্ষামন্ত্রী বরিস পিস্টোরিয়াস বলেছেন, ‘ইউক্রেনে লেপার্ড ট্যাংকগুলো চালু হতে তিন মাস লাগতে পারে।’ সম্ভাব্য তারিখ হিসেবে তিনি মার্চের শেষ কিংবা এপ্রিলের কথা বলেন।
তবে ইউক্রেন বাহিনীতে যুক্তরাষ্ট্রের অ্যাব্রামস ট্যাংক যুক্ত করা অনেক বেশি জটিল হবে। প্রথমে আটলান্টিক মহাসাগর পাড়ি দিতে হবে এগুলোকে। এ ছাড়া ট্যাংকগুলোর ব্যবহার তুলনামূলকভাবে কঠিন। কার্যকর হলেও এগুলো ইউক্রেনে ব্যবহারের জন্য কম উপযুক্ত বলে বিবেচিত।
পেন্টাগনের আন্ডার সেক্রেটারি অব ডিফেন্স ফর পলিসি কলিন কাহল বলেন, ‘অ্যাব্রামস ট্যাংক খুবই জটিল এক অস্ত্র। এটি ব্যয়বহুল এবং এর প্রশিক্ষণ দেওয়া কঠিন।’
ইউরোপিয়ান কাউন্সিল অন ফরেন রিলেশনসের সিনিয়র পলিসি ফেলো গুস্তাভ সি গ্রেসেল বলেন, ‘লেপার্ডের তুলনায় অ্যাব্রামস অনেক ভারী। এ জন্য ইউক্রেনের আলাদা প্রকৌশল ও পুনরুদ্ধার সরঞ্জাম দরকার হবে।’
অ্যাব্রামস ডিজেলের বদলে এক ধরনের জেট ফুয়েলে চলে এবং এতে অনেক জ্বালানি লাগে বলে ব্যয়বহুল। এসব কারণেই জার্মানির লেপার্ড ট্যাংককে ইউক্রেন যুদ্ধের জন্য বেশি সুবিধাজনক হিসেবে দেখা হয়েছে।
যুদ্ধের শুরু থেকে পশ্চিমারা খুব সতর্কতার সঙ্গে ইউক্রেনে অস্ত্র সরবরাহ করেছে। তবে কিয়েভের সাম্প্রতিক সাফল্যের পর রীতিমতো সম্মেলন করে অস্ত্র সরবরাহের ঘোষণা এসেছে। এই অস্ত্র সরবরাহকে পশ্চিমাদেরও যুদ্ধে সক্রিয় অংশগ্রহণ আখ্যা দিয়েছে ক্রেমলিন।
সূত্র: এএফপি, বিবিসি
Copyright Banglar Kontho ©2022
Design and developed by Md Sajibul Alom Sajon