শতভাগ রাষ্ট্রমালিকানাধীন বেসিক ব্যাংক বেসরকারি খাতের সিটি ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত হতে আলোচনা চলছে। তবে সরকারি ব্যাংক বেসরকারি খাতে একীভূত করা অসামঞ্জস্যপূর্ণ, অযৌক্তিক ও বৈষম্য বলে মনে করছেন বেসিক ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এমন পরিস্থিতিতে বেসরকারি খাতের সিটি ব্যাংকের সঙ্গে নয়, বরং সরকারি খাতের অন্য যেকোনো বাণিজ্যিক ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত করার দাবি জানিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদারকে স্মারকলিপি দিয়েছেন বেসিক ব্যাংকের কর্মীরা।
গতকাল মঙ্গলবার বেসিক ব্যাংকের সর্বস্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পক্ষ থেকে গভর্নরের দপ্তরে এই স্মারকলিপি দেওয়া হয়।
গভর্নরকে দেওয়া স্মারকলিপিতে বলা হয়েছে, দেশের ক্ষুদ্র শিল্পে অর্থায়নের লক্ষ্যে ১৯৮৯ সালে বেসিক ব্যাংক লিমিটেডের কার্যক্রম শুরু হয়, যা ১৯৯২ সালে শতভাগ রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়। এরপর থেকে একটি রাষ্ট্রমালিকানাধীন বিশেষায়িত ব্যাংক হিসেবে সরকারি আর্থিক সেবা প্রদান করে আসছে, যা ২০১৫ সালে পুরোপুরি রাষ্ট্রমালিকানাধীন বাণিজ্যিক ব্যাংক হিসেবে রূপান্তরিত হয়। বেসিক ব্যাংক একটি সরকারি খাতের ব্যাংক হিসেবে অত্যন্ত সুনামের সঙ্গে ব্যাংকিং ব্যবসা পরিচালনা করেছে এবং প্রায় ২৩ বছর ধরে বাংলাদেশ সরকারকে বিপুল অঙ্কের মুনাফা প্রদান করেছে, যা অন্যান্য ব্যাংকের কাছে ছিল উদাহরণ। বেসিক ব্যাংকে অন্যান্য রাষ্ট্রমালিকানাধীন ব্যাংকের অনুরূপ চাকরি বিধিমালা অনুসরণ করা হয়, যা বেসরকারি মালিকানার ব্যাংকের সঙ্গে অসামঞ্জস্যপূর্ণ।
জাতীয় বেতন স্কেল-২০১৫ অনুযায়ী, বেসিক ব্যাংকে বিদ্যমান কর্মকর্তা-কর্মচারীদের গ্রেড নির্ধারণ এবং বেতন ও অন্যান্য ভাতাদি প্রদান করা হয়। পাশাপাশি, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পেনশন সুবিধা বলবৎ রয়েছে। এ ছাড়া বেসিক ব্যাংকে নিয়োগ ও পদোন্নতিতে সম্পূর্ণরূপে সরকারি ব্যাংকের অনুরূপ বিধি-বিধান অনুসরণ করা হয়। এ ছাড়া বেসিক ব্যাংকে ১২তম থেকে ২০তম গ্রেডের কর্মচারীদের স্থায়ী চাকরি বিদ্যমান রয়েছে।
শ্রম আইন অনুযায়ী, সরকারি প্রতিষ্ঠান হিসেবে বেসিক ব্যাংকে সরকারি শ্রম অধিদপ্তর কর্তৃক অনুমোদিত ও রেজিস্ট্রেশন প্রাপ্ত কর্মচারী ইউনিয়নের (সিবিএ) কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
বেসিক ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন, দেশের অন্যান্য সরকারি ব্যাংকের ন্যায় শতভাগ রাষ্ট্রমালিকানাধীন বেসিক ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান, পরিচালক, ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং সিইও বাংলাদেশ সরকারের অর্থ মন্ত্রণালয় কর্তৃক নিয়োগপ্রাপ্ত হন। উল্লিখিত বিষয়গুলোর সঙ্গে বেসরকারি কোনো ব্যাংকের সামঞ্জস্যতা নেই। এরই মধ্যে বেসিক ব্যাংকের কর্মকর্তাদের অনেকেই সরকারি ব্যাংকের পদোন্নতির অধীনে পদোন্নতিপ্রাপ্ত হয়েছেন এবং বিভিন্ন সরকারি ব্যাংকের গুরুত্বপূর্ণ পদে পদায়ন করা হয়েছে। স্মারকলিপিতে আরো বলা হয়, বেসরকারি মালিকানাধীন সিটি ব্যাংকের সঙ্গে রাষ্ট্রমালিকানাধীন বেসিক ব্যাংক মার্জারের বিষয়ে যে আলোচনা হয়েছে, তা একেবারেই অসামঞ্জস্যপূর্ণ ও অযৌক্তিক।
যেখানে রাষ্ট্রমালিকানাধীন বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক লিমিটেড এবং রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক অন্য দুটি রাষ্ট্রমালিকানাধীন ব্যাংকের সঙ্গে মার্জ হতে চলেছে, সেখানে রাষ্ট্রমালিকানাধীন বেসিক ব্যাংককে কেন বেসরকারি খাতের সিটি ব্যাংকের সঙ্গে মার্জারের আলোচনা চলছে? মার্জারপ্রক্রিয়ায় কোনোভাবেই বৈষম্য কাম্য নয়।
এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদারের সঙ্গে সিটি ব্যাংকের চেয়ারম্যান আজিজ আল কায়সার ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মাসরুর আরেফিনের উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে সিটি ব্যাংকের সঙ্গে বেসিক ব্যাংককে একীভূত করার বিষয় জানানো হয়।
তার আগে গত ১৯ মার্চ সিটি ব্যাংকের পর্ষদকে বেসিক ব্যাংককে একীভূত করার পরামর্শ দেওয়া হয়। তারপর সিটি ও বেসিক ব্যাংকের পর্ষদের মধ্যে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়। দুই ব্যাংকের কর্মকর্তারা এ নিয়ে নিজেদের মধ্যে আলোচনা করেন। সিটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাসরুর আরেফিন বলেন, ‘স্বতঃপ্রণোদিত একত্রীকরণ হলে বাংলাদেশ ব্যাংক ও সরকারের নীতি সহায়তা যেহেতু অনেক বেশি, তাই সবল ব্যাংক হিসেবে কোনো দুর্বল ব্যাংককে সিটি ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত করা যায় কি না, তা আমরা খতিয়ে দেখছি।’
এক্সিম ও পদ্মা ব্যাংকের সম্পদ মূল্যায়নে নিরীক্ষক নিয়োগ
শরীয়াহভিত্তিক বেসরকারি এক্সিম ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত হচ্ছে চতুর্থ প্রজন্মের পদ্মা ব্যাংক। একীভূতকরণের বিষয়টি বাস্তবায়ন করতে নিরীক্ষক নিয়োগ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। নিরীক্ষক দুটি ব্যাংকের সম্পদ মূল্যায়ন করে দেবে।
গতকাল মঙ্গলবার বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. মেজবাউল হক এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। মেজবাউল হক বলেন, স্বেচ্ছায় যারা এখন পর্যন্ত দুর্বল পাঁচটি ব্যাংক অন্য পাঁচ ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তাদের নিয়ে কাজ করা হবে। একীভূত করার প্রক্রিয়ায় দুই থেকে তিন বছর সময় লাগবে। এ সময় ব্যাংকগুলো তাদের স্বাভাবিক ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনা করবে। মুখপাত্র জানান, এখন পর্যন্ত একীভূত হতে আবেদন করেছে এক্সিম ও পদ্মা ব্যাংক। তারা সমঝোতা চুক্তি করেছে। তাদের সম্পদ মূল্যায়ন করতে অডিট ফার্ম ‘রহমান রহমান হক’কে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। আগামী দুই থেকে তিন মাসের মধ্যে প্রতিষ্ঠানটি দুটি ব্যাংকের আর্থিক অবস্থা মূল্যায়ন করে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেবে। সম্পদ মূল্যায়নের পর দুটি ব্যাংক একমত হলে পরবর্তী ধাপে এগিয়ে যাবে। কিভাবে এগিয়ে যাবে তা একীভূতকরণ নীতিমালায় বলা হয়েছে।
Copyright Banglar Kontho ©2024
Design and developed by Md Sajibul Alom Sajon